বগুড়ায় গত কয়েক দিনের শৈত্যপ্রবাহের কারণে দেশব্যাপী কমেছে তাপমাত্রা। ছবি:সময়ের সন্ধানে
বগুড়া জেলা প্রতিনিধি
বগুড়ায় অল্প শীতেই বেড়েছে পোশাকের চাহিদা গত কয়েক দিনের শৈত্যপ্রবাহের কারণে দেশব্যাপী কমেছে তাপমাত্রা। তারই ধারাবাহিকতায় বগুড়াতেও বেড়েছে শীতের তীব্রতা। শীতের হিমেল হাওয়া আর তার সঙ্গে যোগ হওয়া ঘন কুয়াশার কারণে বগুড়াতে জেঁকে বসেছে শীত। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। শীত থেকে বাঁচতে ছুটছেন নগরীর ফুটপাতসহ গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে। শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায় বেড়েছে গরম কাপড়ের বেচাকেনা।
বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ফুটপাত থেকে শুরু করে বড় বড় মালোগাড়ি বিতানসহ বিভিন্ন অলি-গলিতে গরম পোশাক বিক্রির ধুম পড়েছে। বিশেষ করে জ্যাকেট, সোয়েটার, ক্যাপ, মোজাসহ শীতের হরেক রকম পোশাক বেচাকেনায় ব্যস্ত ব্যবসায়ীরা। শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে কম দামে গরম পোশাক কিনতে ফুটপাতের দোকানগুলোতে ভিড় করছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। এসব দোকান থেকে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকার মধ্যে নানা ধরনের শীতের পোশাক কিনছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
নগরীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ভ্যানে করে পুরনো গরম কাপড় বিক্রির ধুম পড়েছে। এখানে ক্রেতার ভিড়ও চোখে পড়ার মতো। সন্ধ্যার পর থেকে দোকানগুলোতে পা ফেলার জায়গা থাকে না। খুব অল্প দামের মধ্যে পুরনো সোয়েটার, জ্যাকেট, ফুলহাতা গেঞ্জি, মোজা, মাফলার পাওয়া যায়। এসব পোশাক থেকেই বাছাই করে নিজেদের চাহিদা মতো পোশাক কিনছেন স্বল্পআয়ের মানুষ।
ফুটপাতে শীতের কাপড় বিক্রি করা জয়লাল নামে একজন ক্রেতা বলেন, হতদরিদ্র থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন এসব রকমারি পোশাকের ক্রেতা। এখানে স্বল্প আয়ের লোকজন সাধ ও সাধ্যের সমন্বয়ে বিভিন্ন ধরনের পোশাক পাচ্ছেন। তাই কেনাকাটাও বেশি হচ্ছে। আমিও নিজেরসহ ছেলে-মেয়ের জন্য কয়েকটা পোশাক কিনেছি।
কিচক এলাকার কাপড় বিক্রেতা জয়নাল বলেন, ধীরে ধীরে শীত আরও বাড়বে। তাই আমরা বিভিন্ন ধরনের বাহারি রঙের শীতের কাপড় সাজিয়ে রাখছি। আমাদের এখানে শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের মানুষের শীতের পোশাক রয়েছে। প্রতিদিন ৮-১০ হাজার টাকার বেচাবিক্রি হচ্ছে। শীতের তীব্রতা যেমন অনেকের কষ্টের কারণ তেমনি আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের কাছে আশীর্বাদ স্বরূপ। কারণ শুরুতে ধার কর্জ করে ব্যবসা শুরু করেন। বগুড়ার কিচক এলাকার ফুটপাতে পোশাক বিক্রেতা, জয়নাল শীতের কাপড় কেনার জন্য নিম্নআয়ের মানুষ থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তরাও ভিড় করছেন আমাদের ফুটপাতের দোকানে। শীত বাড়ছে তাই ক্রেতাদের চাহিদাও বেড়েছে। পৌষ মাস পুরো শেষ হওয়ার পথে ছিল কিন্তু শীত না পড়ায় বেচাকেনা তেমন হয়নি। এখন শেষ মুহূর্তে ভালো বেচাকেনা হচ্ছে। এবার চালান উঠে লাভের আশায় আছি।
কিচক এলাকায় পোশাক বিক্রেতা আবু সাহিদ ইসলাম বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে শীতের পোশাক ভালোই বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী দোকানে নানা ধরনের নতুন নতুন পোশাক এনেছি। তাই ক্রেতারাও ভিড় করছেন পছন্দের পোশাক কিনতে। পোশাকের দাম সর্বসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকায় বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে।
বগুড়ার কিচকে গরম কাপড় কিনতে আসা আবুল খয়ের আলী নামের এক রিকশাচালক বলেন, শীতের কারণে একদিকে রোজগার কমেছে, অন্যদিকে সোয়েটার কেনা জরুরি হয়ে পড়েছে। গ্রামে আরও বেশি শীত। ছেলে-মেয়েদের শীতবস্ত্র কিনতে হবে। তাও আবার গরিবের মার্কেটে ধনীদের জ্বালায় কাপড়াদি কেনা দায় হয়ে পড়েছে।
বগুড়ার কিচক বাজারের ফুটপাতে ছেলেমেয়েদের জন্য শীতের পোশাক কিনতে আশা শিল্পী আক্তার নামের একজন ক্রেতা বলেন, শীতের আগের কাপড় ছিল। তাই শুরুতে কিনিনি। তাছাড়া প্রথম ভেবেছিলাম গ্ৰামে অতো বেশি শীত পড়বে না। কিন্তু এখন যে অবস্থা গরম কাপড় কেনা ছাড়া উপায় নেই। তাই পরিবারের সবার জন্য শীতের কাপড় কিনতে আসছি। গ্ৰামে আছি আজ ২৩ বছর। গত ছয় সাত বছরের মধ্যে বগুড়ায় এতো শীত পড়েনি। আমরা তো কোনোরকমে শীতের কাপড় কিনতে পারছি, অনেকে তো তাও পারেনি। তাদের জন্য খারাপ লাগছে।
এদিকে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও শ্রমজীবী মানুষ নগরীর ফুটপাতের গরম কাপডের দোকানগুলোতে ভিড় জমালেও ছিন্নমূল মানুষ শীত নিবারণে পড়েছেন মহাবিপদে। খোলা আকাশের নিচে তাদের শীত নিবারণ অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তাদের প্রত্যাশা হৃদয়বানরা শীতবস্ত্র নিয়ে তাদের পাশে এসে দাঁড়াবেন।