গাজীপুর মহানগরে বেতনের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ। ছবি:সময়ের সন্ধানে
আল আমিন স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর
গাজীপুর মহানগরের মালেকের বাড়ি এলাকায় বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেছে টি এন জেড অ্যাপারেলস্ লিমিটেড নামে একটি কারখানার শ্রমিকরা। এছাড়া কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে বোর্ড বাজারের এসএমএস ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেড ও কোনাবাড়ীর বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় লাইফ ট্যাক্স মিলিটেড নামে কারখানার শ্রমিকরা ৩৫ দফা দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন।
শনিবার (০৯ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় মহানগরের মালেকের বাড়ি এলাকায় বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেছে টি এন জেড অ্যাপারেলস্ লিমিটেড নামে কারখানার শ্রমিকরা। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ আছে। ব্যস্ততম মহাসড়ক অবরোধের কারণে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হওয়ায় শত শত কর্মজীবী মানুষ বিড়ম্বনায় পড়েছেন।
গাজীপুর শিল্প পুলিশ ও শ্রমিকরা জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মালেকের বাড়ি এলাকায় টি এন জেড অ্যাপারেলস লিমিটেড নামে একটি পোশাক তৈরি কারখানা আছে। ওই কারখানার শ্রমিকদের বেতন ভাতা না দিয়ে কর্তৃপক্ষ কারখানা বন্ধ রেখেছে। বকেয়া বেতনের দাবিতে টি এন জেড গ্রুপের ছয়টি কারখানার সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের বেতন বকেয়া আছে। এ নিয়ে শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরেই তাদের বেতন পরিশোধের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ তা পরিশোধ করেনি। পরে আজ (শনিবার) সকালে শ্রমিকরা কারখানার সামনে জড়ো হতে থাকেন।
একপর্যায়ে তারা মালেকের বাড়ি কলম্বিয়া মোড় এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে।কারখানা শ্রমিক আলাল উদ্দিন বলেন, গত দুই মাস ধরে বেতন দেই দিচ্ছি বললেও এখন পর্যন্ত বেতন ভাতা পাইনি। যার কারণে বাধ্য হয়েই রাস্তায় নামতে হয়েছে।রাবেয়া আক্তার নামে অপর শ্রমিক বলেন, গত এপ্রিল মাস থেকে কারখানা বন্ধ ছিল। সেপ্টেম্বর মাসে কারখানা খুললেও দুই মাসের বেতন না দিয়ে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন তালবাহানা করছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বারবার বেতন পরিষদের তারিখ দিলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বেতন দিচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে সড়ক অবরোধ করতে হয়েছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খলিলুর রহমান বলেন, কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বেতন সংক্রান্ত সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।অপরদিকে, বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে গাজীপুর মহানগরের বোর্ড বাজারের এসএমএস ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেড শ্রমিকরা কারখানার নিচে অবস্থান করছেন।শ্রমিকরা জানান, কারখানা কর্তৃপক্ষ চলতি বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের বেতন পরিশোধ না করে গত ৬ নভেম্বর সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেন। আজ ৯ নভেম্বর কারখানা খুলে দেওয়ার কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষ আজও কারখানা বন্ধ রেখেছে।
বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়া ও বকেয়া বেতনের দাবিতে ৩০-৩৫ জন শ্রমিক কারখানার নিচে অবস্থান করছেন।এসএমএস ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেডের স্বত্ত্বাধিকারী মালিক শফিকুল আলম বলেন, আগামী সোমবার কল কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি সভা আছে। সেখানেই শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শ্রমিকদের বেতনসহ অন্যান্য দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে পূরণ করা হবে।এদিকে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি থানার বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় লাইফ ট্যাক্স লিমিটেড নামে কারখানার শ্রমিকরা ৩৫ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছে।
পুলিশ ও আন্দোলত শ্রমিকরা জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী থানার বিসিক শিল্প নগরী এলাকার লাইফ ট্যাক্স লিমিটেডের শ্রমিকরা ৩৫ দফা দাবি জানিয়ে কর্মবিরতি পালন করে আসছেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বিরতি, টিফিন বিল, নাইট বিল, কারখানার ম্যানেজমেন্টদের অপসারণসহ ৩৫ দফা দাবি জানিয়েছেন তারা। কারখানায় প্রবেশ না করে বিসিক শিল্প নগরীর প্রবেশ গেটের সামনে শ্রমিকরা অবস্থান নেন। কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে তারা সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যান।
কোনাবাড়ী শিল্প পুলিশের পরিদর্শক মোঃ মোরশেদ বলেন, লাইফ ট্যাক্স লিমিটেড শ্রমিক অসন্তোষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিক ও মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। মালিকপক্ষ দ্রুত সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে বিবেচনা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।