ঢাকা ০২:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ পৌষ ১৪৩১
শিরোনাম ::
রাজশাহীর বাগমারাতে ইটভাটাগুলোতে কয়লার বদলে পুড়ছে কাঠ,কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ নষ্ট ভেড়ামারা উপজেলা বিএনপি ও পৌর বিএনপির উদ্যোগে কর্মী সভা অনুষ্ঠিত রাজশাহীর বাগমারা কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতায়, নবম শ্রেণির ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত কুষ্টিয়ায় সোনালী লাইফ ইন্সুরেন্স এর গ্রাহক মৃত্যুতে নমিনীকে বীমার চেক হস্থান্তর গাইবান্ধায় বিএনপি-জামায়াতের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় আহত ১৩ চট্টগ্রাম লোহাগাড়া কলাউজন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যানের উপর হামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে নতুন রেলপথ ধরে খুলনা ৪ ঘণ্টায়,শুরু হবে ২৪ ডিসেম্বর সারা দেশের স্কুলের ছাত্ররা কওমি মাদরাসায় চলে যাচ্ছে: শিক্ষা সচিব শিবগঞ্জে শোলা গাড়ি সাহা লাস্কর জিলানী ( রা) দাখিল মাদ্রাসা যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস ও বর্ণাঢ্য দিবস উদযাপিত চট্টগ্রামে লোহাগাড়া জেনারেল হাসপাতালের শ্রদ্ধাঞ্জলি

লুইস গ্ল্যুক, অজানা নিরীক্ষা

  • ONLINE DESK
  • আপডেট সময় : ০৩:৪৮:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৩
  • 67

কোনো কিছুর অণুপ্রেরণা কবিতা। বাকি সব সৃষ্টি তার মতো চলুক। এটি যেকোনো কবির ভাবনা! তিনি কবি হতে পারেন বলেই এমন দৃষ্টতা। বাদ দেই প্রসঙ্গ। কবি না হলেও কবিতা ভালোবাসে; সাহিত্য ভালোবাসে; শিল্প আলোড়ন তুলে এমন মানুষতো প্রায় সবাই।

বাহুল্য এত কথা বলছি ২০২০ সালে সাহিত্যে নোবেলজয়ী আমেরকিার কবি লুইস গ্ল্যুকের কথা বলব বলে।
লুইস গ্ল্যুক একজন কবি। অধ্যাপনা করেছেন। ভাব বিলিয়ে গিয়েছেন পরিবেশে। তার ১২টি কবিতার বই আছে। তিনি প্রবন্ধও লিখেছেন। তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ‘দ্য ওয়াইল্ড আইরিস’ এবং ‘ফেইথফুল অ্যান্ড ভার্চুয়াস নাইট’। অন্য কাব্যগ্রন্থগুলো হলো- ফার্স্টবর্ন (১৯৬৮), দ্য হাউস অন মার্শল্যান্ড (১৯৭৫), দ্য গার্ডেন (১৯৭৬), ডিসেনডিং ফিগার (১৯৮০), দ্য ট্রায়াম্ফ অব অ্যাকিলিস (১৯৮৫), অ্যারার‌্যাট (১৯৯০), দ্য ফার্স্ট ফোর বুকস অব পোয়েমস (১৯৯৫), মিডোল্যান্ডস (১৯৯৬), ভিটা নোভা (১৯৯৯), দ্য সেভেন এইজেস (২০০১), অক্টোবর (২০০৪), অ্যাভার্নো (২০০৬), অ্যা ভিলেজ লাইফ (২০০৯) এবং পোয়েমস ১৯৬২-২০১২ (২০১২)। সাহিত্যগুণের জন্য সবসময়ই সমাদৃত লুইস। ১৯৯২ সালে প্রকাশিত কবিতার বই ‘দ্য ওয়াইল্ড আইরিস’ তাকে এনে দেয় পুলিৎজার পুরস্কার। এই সাহিত্যিক যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হিউম্যানিটিজ মেডেল, ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ড, ন্যাশনাল বুক ক্রিটিক সার্কেল অ্যাওয়ার্ড ও বলিঞ্জেন পুরস্কারসহ অনেক বড় বড় সাহিত্য পুরস্কার জিতেছেন। তার লেখায় দেখা মেলে পারিবারিক জীবন, বাল্যকাল আর গ্রিক-রোমান পৌরাণিক কাহিনীর সাবলীল ও নান্দনিক প্রকাশ। লুইস গ্ল্যুক ১৯৪৩ সালের ২২ এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে এক হাঙ্গেরিয়ান বংশোদ্ভূত ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। যে কারণে তার বংশনাম ইদ্দিশ ভাষার অন্তর্গত।

একজন শিল্পপ্রেমিক হিসেবে প্রতিবছরের সাহিত্যে নোবলজয়ী কে হন এ তীব্র আকাক্সক্ষা সবার। খুব ছোটবেলা থেকে জেনে এসেছি কারা এমন অসম্ভব প্রতিভাবান। ফলে জানি এবং অনেকে আমাদের পাশে নানাভাবে ঘুরে বেরিয়েছেন। একজন গুন্টার গ্রাস যখন ঢাকা-কলকাতা ঘুরেন এবং তার সহযাত্রীর মুখে যখন তার বর্ণনা শুনি তখন নোবেলজয়ী মানুষটি নানাভাবে পাশেই ঘুরেন। একজন অ্যালেন গিন্সবার্গ যখন আমার দেশ নিয়ে কবিতা লিখেন তখন তিনি পাশের মানুষই হন। আবার তার ধোয়া ছাড়ার ছবি যখন আপন কেউ তুলেন তখন তিনি পাশেরই হন। এভাবে একজন বাঙালি; আরো এগিয়ে সহিত্যপ্রেমী বাঙালি নোবেলজয়ী সাহিত্যিকদের চিনে যান। যেমন আমরা এবার চিনছি মার্কিন কবি লুইস গ্ল্যুককে। খোদ নোবেলসংশ্লিষ্ট সুইডিস কমিটি বলছে, মার্কিন সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য গ্ল্যুককে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ফলে ইতিহাসে ১৬তম নারী হিসেবে নোবেল পেলেন লুইস গ্ল্যুক। ১৯৯৩ সালে নোবেল পাওয়া বিখ্যাত উপন্যাসিক টনি মরিসনের পর এই প্রথম কোনো আমেরিকান নারী সাহিত্যিকের এ সম্মাননা লাভ। নোবেল কমিটি বলছে, লুইস হলেন আমেরিকার বর্তমান সাহিত্য জগতের সেরাদের অন্যতম। মার্কিন সাহিত্যে লুইসের অবদানের বিষয়ে নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান আন্ডেরস ওলসন বলেন, তার লেখায় রয়েছে রসবোধের তীব্র উপস্থিতি, সরলতা, আর দৃঢ়তা। এ কবি লঙ সারা লরেন্স কলেজ, উইলিয়াম কলেজ, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাব্যকলা পড়িয়েছেন।

১৯৬৮ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কবিতার বই ফার্স্টবর্ন। এ বইয়ে তার লেখার ছন্দ আর সাহিত্যবোধের যে প্রকাশ তার প্রশংসা করতে ভোলেনি নোবেল কমিটি। নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তার সব কাজেই স্পষ্টবাদিতার প্রয়াস লক্ষ্যণীয়। শৈশব ও পারিবারিক জীবন এবং বাবা-মা আর ভাইবোনের সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক সবসময় তার কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছে। তিনি মিথ ও শাস্ত্রীয় মোটিফ থেকে প্রেরণা নিয়ে বিশ্বজনীন হওয়ার চেষ্টা করেছেন। টেকনিকের অভিনবত্ব, সেন্সিটিভিটি তথা স্পর্শকাতরতা তার কবিতার অস্থিমজ্জায়। কবিতার শিল্পপ্রকৌশলগত ভিন্নতার কারণে তিনি বহুল প্রশংসিত।
লুইসের সৃষ্টি পড়তে হবে। হয়তো তিনি ক্রমশ সৃষ্টি ভাণ্ডার বাড়াতেনই। শেষ বয়সে প্রতিষ্ঠার শেষ পর্যায়ে তিনি নোবেলজয়ীর স্বীকৃতি পেলেন। একজন প্রকৃত শিল্পী পুরস্কারের তরে নন। ফলে স্বভাবতই অনুমেয় গ্ল্যুক তার প্রেরণার একটি পালক পেয়েছেন। তিনি এমন পালকে ছেয়ে আছেন। তিনি একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কাব্যকলা পড়িয়েছেন। ভাবার চেষ্টা করছি একজন কবি জগতের অধিশ্বর একটি দেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাব্যকলার ক্লাস নিচ্ছেন; কেমন দৃশ্য হবে। আমার চোখে এটি চমৎকার একটি মোহলাগা ক্ষণ। এমন ক্ষণের স্বাক্ষী যদি কোনোভাবে হতে পারতাম। আর এমন ক্ষণের নিয়ন্তা কত না ক্ষমতাধর। গ্ল্যুক সেই ক্ষমতাধর মানুষ।

সমাজ কাউকে তুলে ধরলেই আমরা তাকে চিনি এ অক্ষমতা নিয়েই বলি গ্ল্যুকের সৃষ্টিকর্ম এখন অনুবাদ হচ্ছে; এভাবেই তার সৃষ্টিকর্ম আমাদের হাতের কাছে। তাকে নানাভাবে এখন আমরা সংগ্রহ করছি। এক প্রবাসি কবি গ্ল্যুককে দেখার সময় বর্ণনা করেছেন। এতে তিনি গ্ল্যুকের সঙ্গে তার দেখা হওয়ার একটি ক্ষণ বর্ণনা করেছেন। এতে দেখা যায় গ্ল্যুক কবিকে বলছেন- একজন কবি কীভাবে দেশ ছেড়ে বাঁচে? এ কথাটি থেকে গ্ল্যুককে ‘অদেখা’ আবিষ্কার করছি। তিনি সত্যিই আরাধ্য; সাহিত্যে, দেশপ্রেমে, সংস্কৃতিতে।

গ্ল্যুক একজন কবি তো সহজেই নিজেকে ঘুরেফিরে সাহিত্যে বলবেন। গ্ল্যুককে মাঝে মাঝে আত্মজীবনীমূলক কবি হিসেবে বর্ণনা করা হয়। এ কথাটি মনে ধরেছে। পৃথিবীর তাবৎ সাহিত্যিক-কবি চেতনে-অবচেতনে সাহিত্যে তাকেই বলে গেছেন। নানাভাবে এটি হয়েছে। এ ছাড়া কোনো গতি নেই বলে আমার ক্ষুদ্রজ্ঞানের মত। মতান্তর থাকতে পারে; তবে আমি বলব; এ আমার দৃষ্টতা। শিল্প শিল্পীকেই উপস্থাপন করে। এ ভিন্ন প্রসঙ্গ।
গ্ল্যুকের বাবাও কবি হতে চেয়েছিলেন। পরে ব্যবসায়ী হয়ে প্রতিষ্টিত হলেন। হয়তো তার ব্যবসায়ী হওয়ার ফলেই গ্ল্যুকের কবি হয়ে ওঠা। বাবার জিনই তার মধ্যে প্রবাহিত।

গ্ল্যুকের পিতামহ, দাদু-ঠাকুরমা, হাঙ্গেরীয় ইহুদি। পরে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন। শেষ পর্যন্ত তাদের নিউ ইয়র্কে মুদি দোকান ছিল। গ্ল্যুকের বাবা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া তার পরিবারের জ্যেষ্ঠ সন্তান। গ্ল্যুকের মা ওয়েলসলে কলেজের স্নাতক। ছোটবেলা থেকেই, গ্ল্যুকর তার বাবা-মার কাছ থেকে গ্রিক পুরাণ এবং জোয়ান অব আর্কের কিংবদন্তীর মতো ক্লাসিক গল্পের একটি শিক্ষা লাভ করেছিলেন। তিনি খুব অল্প বয়সেই কবিতা লিখতে শুরু করেছিলেন।

কিশোর বয়সে গ্ল্যুক অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা নামক রোগের শিকার হন। একটি প্রবন্ধে এই অসুস্থতার বর্ণনা দিয়েছেন। তার জন্মের আগেই তার বড়ো বোন এই রোগে মারা যান। জর্জ ডব্লিউ হিউলেট উচ্চ বিদ্যালয়, নিউ ইয়র্ক-এ পড়াকালীন তিনি মনঃসমীক্ষার চিকিৎসা শুরু করেন। কয়েক মাস পরে, তার পুনর্বাসনের দিকে মনোনিবেশ করার জন্য তাকে স্কুল থেকে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, যদিও তিনি ১৯৬১ সালে স্নাতক হন। এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি লিখেছেন, ‘আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে একসময় আমি মারা যাব। আমি যে বিষয়টি আরো স্পষ্টভাবে জানতাম, তার চেয়ে বেশি দৃঢ়রূপে, আমি মরতে চাইনি।’ তিনি পরবর্তী সাত বছর থেরাপিতে ব্যয় করেছেন, যা তিনি অসুস্থতা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করার এবং তাকে কীভাবে চিন্তা-ভাবনা করার তা শেখানোর কৃতিত্ব দিয়েছেন।

তার অবস্থার ফলে গ্লিক পুরোদস্তুর ছাত্র হিসেবে কলেজে ভর্তি হননি। তিনি থেরাপির পক্ষে উচ্চশিক্ষা বঞ্চিত করার সিদ্ধান্তটি প্রয়োজনীয় হিসেবে বর্ণনা করেছেনÑ ‘আমার আবেগময় অবস্থা, আমার আচরণের চরম অনড়তা এবং আচারের ওপর বিশ্বাসঘাতক নির্ভরতা শিক্ষার অন্যান্য রূপকে অসম্ভব করে তুলেছে।’ পরিবর্তে, তিনি সারা লরেন্স কলেজে একটি কবিতা ক্লাস নিয়েছিলেন এবং ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত তিনি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব জেনারেল এডুকেশনের কবিতা কর্মশালায় ভর্তি হন; যা অপ্রচলিত শিক্ষার্থীদের জন্য প্রোগ্রাম দেয়। সেখানে থাকাকালীন তিনি লনি অ্যাডামস এবং স্ট্যানলি কুনিটসের সঙ্গে পড়াশোনা করেছিলেন।

পয়েটস অ্যান্ড রাইটারস ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গ্ল্যুক তার জীবন ও কাজের মাঝে ভারসাম্য রক্ষার বিষয়ে বলেন। তিনি বলেন, আপনি যদি আপনার প্রকৃত কাজ খুঁজে পান তবে আপনি বাস করতে পারবেন। ক্ষুদ্র ইংরেজি জ্ঞানে ভাষান্তরটি এমনই মনে হয়েছে।

গত ১৩ অক্টোবর আশি বছর বয়সে প্রয়াত হলেন কবি লুইজ গ্ল্যুক (২৩ এপ্রিল ১৯৪৩-১৩ অক্টোবর ২০২৩)।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

রাজশাহীর বাগমারাতে ইটভাটাগুলোতে কয়লার বদলে পুড়ছে কাঠ,কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ নষ্ট

লুইস গ্ল্যুক, অজানা নিরীক্ষা

আপডেট সময় : ০৩:৪৮:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৩

কোনো কিছুর অণুপ্রেরণা কবিতা। বাকি সব সৃষ্টি তার মতো চলুক। এটি যেকোনো কবির ভাবনা! তিনি কবি হতে পারেন বলেই এমন দৃষ্টতা। বাদ দেই প্রসঙ্গ। কবি না হলেও কবিতা ভালোবাসে; সাহিত্য ভালোবাসে; শিল্প আলোড়ন তুলে এমন মানুষতো প্রায় সবাই।

বাহুল্য এত কথা বলছি ২০২০ সালে সাহিত্যে নোবেলজয়ী আমেরকিার কবি লুইস গ্ল্যুকের কথা বলব বলে।
লুইস গ্ল্যুক একজন কবি। অধ্যাপনা করেছেন। ভাব বিলিয়ে গিয়েছেন পরিবেশে। তার ১২টি কবিতার বই আছে। তিনি প্রবন্ধও লিখেছেন। তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ‘দ্য ওয়াইল্ড আইরিস’ এবং ‘ফেইথফুল অ্যান্ড ভার্চুয়াস নাইট’। অন্য কাব্যগ্রন্থগুলো হলো- ফার্স্টবর্ন (১৯৬৮), দ্য হাউস অন মার্শল্যান্ড (১৯৭৫), দ্য গার্ডেন (১৯৭৬), ডিসেনডিং ফিগার (১৯৮০), দ্য ট্রায়াম্ফ অব অ্যাকিলিস (১৯৮৫), অ্যারার‌্যাট (১৯৯০), দ্য ফার্স্ট ফোর বুকস অব পোয়েমস (১৯৯৫), মিডোল্যান্ডস (১৯৯৬), ভিটা নোভা (১৯৯৯), দ্য সেভেন এইজেস (২০০১), অক্টোবর (২০০৪), অ্যাভার্নো (২০০৬), অ্যা ভিলেজ লাইফ (২০০৯) এবং পোয়েমস ১৯৬২-২০১২ (২০১২)। সাহিত্যগুণের জন্য সবসময়ই সমাদৃত লুইস। ১৯৯২ সালে প্রকাশিত কবিতার বই ‘দ্য ওয়াইল্ড আইরিস’ তাকে এনে দেয় পুলিৎজার পুরস্কার। এই সাহিত্যিক যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হিউম্যানিটিজ মেডেল, ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ড, ন্যাশনাল বুক ক্রিটিক সার্কেল অ্যাওয়ার্ড ও বলিঞ্জেন পুরস্কারসহ অনেক বড় বড় সাহিত্য পুরস্কার জিতেছেন। তার লেখায় দেখা মেলে পারিবারিক জীবন, বাল্যকাল আর গ্রিক-রোমান পৌরাণিক কাহিনীর সাবলীল ও নান্দনিক প্রকাশ। লুইস গ্ল্যুক ১৯৪৩ সালের ২২ এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে এক হাঙ্গেরিয়ান বংশোদ্ভূত ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। যে কারণে তার বংশনাম ইদ্দিশ ভাষার অন্তর্গত।

একজন শিল্পপ্রেমিক হিসেবে প্রতিবছরের সাহিত্যে নোবলজয়ী কে হন এ তীব্র আকাক্সক্ষা সবার। খুব ছোটবেলা থেকে জেনে এসেছি কারা এমন অসম্ভব প্রতিভাবান। ফলে জানি এবং অনেকে আমাদের পাশে নানাভাবে ঘুরে বেরিয়েছেন। একজন গুন্টার গ্রাস যখন ঢাকা-কলকাতা ঘুরেন এবং তার সহযাত্রীর মুখে যখন তার বর্ণনা শুনি তখন নোবেলজয়ী মানুষটি নানাভাবে পাশেই ঘুরেন। একজন অ্যালেন গিন্সবার্গ যখন আমার দেশ নিয়ে কবিতা লিখেন তখন তিনি পাশের মানুষই হন। আবার তার ধোয়া ছাড়ার ছবি যখন আপন কেউ তুলেন তখন তিনি পাশেরই হন। এভাবে একজন বাঙালি; আরো এগিয়ে সহিত্যপ্রেমী বাঙালি নোবেলজয়ী সাহিত্যিকদের চিনে যান। যেমন আমরা এবার চিনছি মার্কিন কবি লুইস গ্ল্যুককে। খোদ নোবেলসংশ্লিষ্ট সুইডিস কমিটি বলছে, মার্কিন সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য গ্ল্যুককে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ফলে ইতিহাসে ১৬তম নারী হিসেবে নোবেল পেলেন লুইস গ্ল্যুক। ১৯৯৩ সালে নোবেল পাওয়া বিখ্যাত উপন্যাসিক টনি মরিসনের পর এই প্রথম কোনো আমেরিকান নারী সাহিত্যিকের এ সম্মাননা লাভ। নোবেল কমিটি বলছে, লুইস হলেন আমেরিকার বর্তমান সাহিত্য জগতের সেরাদের অন্যতম। মার্কিন সাহিত্যে লুইসের অবদানের বিষয়ে নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান আন্ডেরস ওলসন বলেন, তার লেখায় রয়েছে রসবোধের তীব্র উপস্থিতি, সরলতা, আর দৃঢ়তা। এ কবি লঙ সারা লরেন্স কলেজ, উইলিয়াম কলেজ, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাব্যকলা পড়িয়েছেন।

১৯৬৮ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কবিতার বই ফার্স্টবর্ন। এ বইয়ে তার লেখার ছন্দ আর সাহিত্যবোধের যে প্রকাশ তার প্রশংসা করতে ভোলেনি নোবেল কমিটি। নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তার সব কাজেই স্পষ্টবাদিতার প্রয়াস লক্ষ্যণীয়। শৈশব ও পারিবারিক জীবন এবং বাবা-মা আর ভাইবোনের সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক সবসময় তার কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছে। তিনি মিথ ও শাস্ত্রীয় মোটিফ থেকে প্রেরণা নিয়ে বিশ্বজনীন হওয়ার চেষ্টা করেছেন। টেকনিকের অভিনবত্ব, সেন্সিটিভিটি তথা স্পর্শকাতরতা তার কবিতার অস্থিমজ্জায়। কবিতার শিল্পপ্রকৌশলগত ভিন্নতার কারণে তিনি বহুল প্রশংসিত।
লুইসের সৃষ্টি পড়তে হবে। হয়তো তিনি ক্রমশ সৃষ্টি ভাণ্ডার বাড়াতেনই। শেষ বয়সে প্রতিষ্ঠার শেষ পর্যায়ে তিনি নোবেলজয়ীর স্বীকৃতি পেলেন। একজন প্রকৃত শিল্পী পুরস্কারের তরে নন। ফলে স্বভাবতই অনুমেয় গ্ল্যুক তার প্রেরণার একটি পালক পেয়েছেন। তিনি এমন পালকে ছেয়ে আছেন। তিনি একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কাব্যকলা পড়িয়েছেন। ভাবার চেষ্টা করছি একজন কবি জগতের অধিশ্বর একটি দেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাব্যকলার ক্লাস নিচ্ছেন; কেমন দৃশ্য হবে। আমার চোখে এটি চমৎকার একটি মোহলাগা ক্ষণ। এমন ক্ষণের স্বাক্ষী যদি কোনোভাবে হতে পারতাম। আর এমন ক্ষণের নিয়ন্তা কত না ক্ষমতাধর। গ্ল্যুক সেই ক্ষমতাধর মানুষ।

সমাজ কাউকে তুলে ধরলেই আমরা তাকে চিনি এ অক্ষমতা নিয়েই বলি গ্ল্যুকের সৃষ্টিকর্ম এখন অনুবাদ হচ্ছে; এভাবেই তার সৃষ্টিকর্ম আমাদের হাতের কাছে। তাকে নানাভাবে এখন আমরা সংগ্রহ করছি। এক প্রবাসি কবি গ্ল্যুককে দেখার সময় বর্ণনা করেছেন। এতে তিনি গ্ল্যুকের সঙ্গে তার দেখা হওয়ার একটি ক্ষণ বর্ণনা করেছেন। এতে দেখা যায় গ্ল্যুক কবিকে বলছেন- একজন কবি কীভাবে দেশ ছেড়ে বাঁচে? এ কথাটি থেকে গ্ল্যুককে ‘অদেখা’ আবিষ্কার করছি। তিনি সত্যিই আরাধ্য; সাহিত্যে, দেশপ্রেমে, সংস্কৃতিতে।

গ্ল্যুক একজন কবি তো সহজেই নিজেকে ঘুরেফিরে সাহিত্যে বলবেন। গ্ল্যুককে মাঝে মাঝে আত্মজীবনীমূলক কবি হিসেবে বর্ণনা করা হয়। এ কথাটি মনে ধরেছে। পৃথিবীর তাবৎ সাহিত্যিক-কবি চেতনে-অবচেতনে সাহিত্যে তাকেই বলে গেছেন। নানাভাবে এটি হয়েছে। এ ছাড়া কোনো গতি নেই বলে আমার ক্ষুদ্রজ্ঞানের মত। মতান্তর থাকতে পারে; তবে আমি বলব; এ আমার দৃষ্টতা। শিল্প শিল্পীকেই উপস্থাপন করে। এ ভিন্ন প্রসঙ্গ।
গ্ল্যুকের বাবাও কবি হতে চেয়েছিলেন। পরে ব্যবসায়ী হয়ে প্রতিষ্টিত হলেন। হয়তো তার ব্যবসায়ী হওয়ার ফলেই গ্ল্যুকের কবি হয়ে ওঠা। বাবার জিনই তার মধ্যে প্রবাহিত।

গ্ল্যুকের পিতামহ, দাদু-ঠাকুরমা, হাঙ্গেরীয় ইহুদি। পরে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন। শেষ পর্যন্ত তাদের নিউ ইয়র্কে মুদি দোকান ছিল। গ্ল্যুকের বাবা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া তার পরিবারের জ্যেষ্ঠ সন্তান। গ্ল্যুকের মা ওয়েলসলে কলেজের স্নাতক। ছোটবেলা থেকেই, গ্ল্যুকর তার বাবা-মার কাছ থেকে গ্রিক পুরাণ এবং জোয়ান অব আর্কের কিংবদন্তীর মতো ক্লাসিক গল্পের একটি শিক্ষা লাভ করেছিলেন। তিনি খুব অল্প বয়সেই কবিতা লিখতে শুরু করেছিলেন।

কিশোর বয়সে গ্ল্যুক অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা নামক রোগের শিকার হন। একটি প্রবন্ধে এই অসুস্থতার বর্ণনা দিয়েছেন। তার জন্মের আগেই তার বড়ো বোন এই রোগে মারা যান। জর্জ ডব্লিউ হিউলেট উচ্চ বিদ্যালয়, নিউ ইয়র্ক-এ পড়াকালীন তিনি মনঃসমীক্ষার চিকিৎসা শুরু করেন। কয়েক মাস পরে, তার পুনর্বাসনের দিকে মনোনিবেশ করার জন্য তাকে স্কুল থেকে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, যদিও তিনি ১৯৬১ সালে স্নাতক হন। এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি লিখেছেন, ‘আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে একসময় আমি মারা যাব। আমি যে বিষয়টি আরো স্পষ্টভাবে জানতাম, তার চেয়ে বেশি দৃঢ়রূপে, আমি মরতে চাইনি।’ তিনি পরবর্তী সাত বছর থেরাপিতে ব্যয় করেছেন, যা তিনি অসুস্থতা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করার এবং তাকে কীভাবে চিন্তা-ভাবনা করার তা শেখানোর কৃতিত্ব দিয়েছেন।

তার অবস্থার ফলে গ্লিক পুরোদস্তুর ছাত্র হিসেবে কলেজে ভর্তি হননি। তিনি থেরাপির পক্ষে উচ্চশিক্ষা বঞ্চিত করার সিদ্ধান্তটি প্রয়োজনীয় হিসেবে বর্ণনা করেছেনÑ ‘আমার আবেগময় অবস্থা, আমার আচরণের চরম অনড়তা এবং আচারের ওপর বিশ্বাসঘাতক নির্ভরতা শিক্ষার অন্যান্য রূপকে অসম্ভব করে তুলেছে।’ পরিবর্তে, তিনি সারা লরেন্স কলেজে একটি কবিতা ক্লাস নিয়েছিলেন এবং ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত তিনি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব জেনারেল এডুকেশনের কবিতা কর্মশালায় ভর্তি হন; যা অপ্রচলিত শিক্ষার্থীদের জন্য প্রোগ্রাম দেয়। সেখানে থাকাকালীন তিনি লনি অ্যাডামস এবং স্ট্যানলি কুনিটসের সঙ্গে পড়াশোনা করেছিলেন।

পয়েটস অ্যান্ড রাইটারস ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গ্ল্যুক তার জীবন ও কাজের মাঝে ভারসাম্য রক্ষার বিষয়ে বলেন। তিনি বলেন, আপনি যদি আপনার প্রকৃত কাজ খুঁজে পান তবে আপনি বাস করতে পারবেন। ক্ষুদ্র ইংরেজি জ্ঞানে ভাষান্তরটি এমনই মনে হয়েছে।

গত ১৩ অক্টোবর আশি বছর বয়সে প্রয়াত হলেন কবি লুইজ গ্ল্যুক (২৩ এপ্রিল ১৯৪৩-১৩ অক্টোবর ২০২৩)।