ছবি:সংগৃহীত
মোবাইল রিচার্জের মেয়াদ শেষে অব্যবহৃত মিনিট অপারেটররা কেটে নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কাছে এর সমাধান চেয়েছেন গ্রাহক ও রিচার্জ ব্যবসায়ীরা।
‘টেলিযোগাযোগ সেবা’ নিয়ে বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে এক গণশুনানিতে তাদের এই ক্ষোভের প্রকাশ ঘটে।
বাংলাদেশ মোবাইল রিচার্জ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলু শুনানিতে প্রশ্ন রাখেন, রিচার্জের মেয়াদ শেষে খরচ না হওয়া টাকা কি পচে যায়? তা না হলে পরবর্তী রিচার্জের সঙ্গে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে তা ফিরিয়ে দেওয়া হয় না কেন?
“সরকার যদি কোটি কোটি গ্রাহকের মোবাইল ব্যালেন্সের নিরাপত্তাটুকু দিতে না পারে, তাহলে ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ হবে কী করে?”
প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা শুনানিতে গ্রাহকদের পাশাপাশি অংশীজনরাও সশরীরে ও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশ নিয়ে দেশজুড়ে মোবাইল অপরারেটদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও হয়রানির অভিযোগ করেন।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে গণশুনানিতে উপস্থিত ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
প্রতিমন্ত্রী ও বিটিআরসির কর্মকর্তারা অংশীজন এবং গ্রাহকদের বক্তব্য শোনেন এবং কিছু সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান দেন।
গণশুনানিতে মোবাইল সেবার মূল্য বৃদ্ধি, রিচার্জের মেয়াদ শেষে অব্যবহৃত মিনিট কেটে নেওয়ার বিষয়টি এসেছে বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারীর বক্তব্যে।
বাংলাদেশ মোবাইল রিচার্জ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বুলু চারটি মোবাইল রিচার্জ কার্ড হাতে নিয়ে প্রশ্ন করতে দাঁড়ান।
তিনি বলেন, “এই যে আমি চাইরটা কার্ড নিয়া আসছি। বাংলালিংকের কার্ডে ১৯ টাকায় দুই দিন মেয়াদ, রবির আছে ১৯ টাকায় ২৪ ঘণ্টা মেয়াদ এবং এয়ারটেলের আছে ১৯ টাকায় তিন দিন মেয়াদ। গ্রামীণফোনের আছে দুই দিন মেয়াদ। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এগুলার মেয়াদ থাকবো ক্যান? রিচার্জের মেয়াদ শেষে এই ট্যাকা কি পইচ্চা যায়?
বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে গণশুনানিতে অতিথি ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
“এইটা মানুষের টাকা। আপনারা ভাবেন, আমরা যদি ১৮ কোটি লোক হই আর সবাই ২০ ট্যাকা কইরা ভরি, তারপর কথা না কই; তাইলে হিসাব করেন একেক দিনে কত কোটি টাকা এই কোম্পানিগুলো সিস্টেমের মাধ্যমে নিয়া যাইতেছে। এখন উচিত হচ্ছে, এই সিস্টেমটাকে বাংলাদেশে বন্ধ করে দেওয়া।”
রিচার্জ ব্যবসায়ীদের এ নেতা বলেন, “আমরা বারবার বলছি, অনেক গরিব মানুষ, কেউ ভিক্ষা কইরা আইন্যা ২০ টাকা ভরে। সে যদি সেই টাকার কথা না বলে, তার মানে তার টাকা চলে যাবে। এ কোম্পানিগুলো হাজার হাজার কোটি টাকা সিস্টেমের মাধ্যমে নিয়ে যাবে, তা সহ্য করার মত না।”
বাংলাদেশ মোবইল ফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদও একই ধরনের প্রশ্ন উত্থাপন করেন।
তিনি বলেন, “অব্যবহৃত টাকা গ্রাহক আর ফেরত পাচ্ছেন না, তারা (অপারেটররা) কেটে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা মনে করি, এটি সম্পূর্ণ আইনবহির্ভূত। এটি একটি অপরাধ, দিনে দুপুরে ডাকাতি করার মত।”
মেয়াদ শেষে রিচার্জের মিনিট কেটে নেওয়ার (ফ্ল্যাশ আউট) বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে কমিশনের সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খলিল-উর-রহমান জবাব দেন।
তিনি বলেন, “ব্যালেন্স ফ্লাশ আউটের বিষয়টি আমাদের এখানে এসেছিল। পরে আমরা সেই অপারেটরকে বলেছি, তারা ফ্ল্যাশ আউট না করে যেন পূর্বের জায়গায় থাকে। ১২ ও ১৩ মে আমরা তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে বসছি। আমরা সুনির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা করতে চাই।
“সর্বোচ্চ-সর্বনিম্ন ব্যালেন্স কত হওয়া উচিত, ব্যালেন্সের মেয়াদ কেমন হওয়া উচিত এবং ফ্ল্যাশ আউট করা যাবে কিনা, এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালা আসবে। সেখানে বোনাসের একটা বিষয় আসবে। সেগুলোও আমরা আলোচনা করে সমাধানে পৌঁছাব বলে আশা করছি।”
তিনি জানান, মোবাইল ইন্টারনেট প্যাকেজগুলো কেমন হওয়া উচিত, সে বিষয়ে জরিপ চালিয়ে গত অক্টোবরে দাম ঠিক করে দেয় বিটিআরসি। এখন আবার একটা জরিপ চলছে। ৬৫ হাজার মানুষ তাতে মতামত দিয়েছে। তার ভিত্তিতে ইন্টারনেট প্যাকেজের বিষয়টি পুনর্নির্ধারণ করা যেতে পারে।
শুনানিতে অংশ নিয়ে রাজধানীর বাসাবোর বাসিন্দা শিমুল কুমার মালকার ‘মোবাইলের ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস (ভাস)’ থেকে ফোন আসার পর গ্রাহকের অজান্তে টাকা কেটে নেওয়ার অভিযোগ করেন।
অপারেটররা কীভাবে ‘প্রতারণা’ করছে, নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে তার বর্ণনা দেন এ মোবাইল গ্রাহক।
বাংলাদেশ মোবাইল রিচার্জ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলু শুনানিতে অংশ নিয়ে অভিযোগ তুলে ধরেন।
শিমুল কুমার বলেন, “প্রত্যেকটা কোম্পানির ভ্যাস (ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস) আছে। বিভিন্ন শর্ট কোড থেকে গ্রাহকের মোবাইলে কল আসে। এরপর বিভিন্ন সার্ভিস অ্যাক্টিভ করে ব্যালেন্স থেকে টাকা কেটে নিচ্ছে অপারেটররা। দেখা গেছে, আমি একটা কল রিসিভ করছি, ৩ সেকেন্ড পরেই সেটা কেটে গেছে। এরপরে আমার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নিছে।”
তিনি এমন প্রতারণার সমাধান চাইলে খলিল-উর-রহমান জবাব দেন। তিনি বলেন, “আমরা এখনও এমন কোনো সিস্টেম চালু করি নাই যে, ইনকামিং কলের পর আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নিয়ে যাবে। এটা শুধু রিভার্স বিলিংয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়। কল সেন্টারে এ সুযোগগুলো থাকে।”
তার কথার পরিপ্রেক্ষিতে শিমুল কুমার জানান, টাকা কেটে নেওয়ার পর কল সেন্টারে যোগাযোগ করা হলে সেই টাকা ফেরত দেয়। তবে সারা দেশের কোটি কোটি গ্রাহক তো টাকা ফেরত পাচ্ছেন না, কারণ বেশিরভাগ গ্রাহক বিষয়টি জানেনই না।
তখন খলিল-উর-রহমান বলেন, “আমরা অবশ্যই বিষয়টি দেখব। আপনার অভিযোগটা আমরা নিলাম।”