ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনারের খুন ফ্ল্যাট ঘিরেই রহস্য। ছবি:সংগৃহীত
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনারের হত্যাকাণ্ড নিয়ে তুমুল চাঞ্চল্যের মধ্যেই রহস্য দেখা দিয়েছে কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিভা গার্ডেন্সের একটি ফ্ল্যাট (৫৬বিইউ) ঘিরে।
সঞ্জিভা গার্ডেন্সের ওই ফ্ল্যাটেই এমপি আনারকে হত্যা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। সিআইডির ডিআইজি বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, তাদের কাছে ক্লু আছে যে সঞ্জিভা গার্ডেন্সের ৫৬বিইউ ফ্ল্যাটের ভেতরেই বাংলাদেশের এমপিকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে।
কিন্তু হত্যার পর এমপি আনারের মরদেহ কোথায় নেয়া হয়েছে, সে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জানা গেছে, ওই ফ্ল্যাটটির মালিক রাজ্য সরকারের শুল্ক দফতরের কর্মকর্তা। আর ফ্ল্যাটটি যিনি ভাড়া নিয়েছিলেন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রবাসী ভারতীয়। সেই ফ্ল্যাটেই গত ১৩ মে উঠেছিলেন এমপি আনার।
এর আগে কলকাতার পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তারা দুটি মোবাইলের নেটওয়ার্ক ট্র্যাক করছিল। সেখান থেকেই দেখা গেছে, সঞ্জিভা গার্ডেন্সই এমপি আনারের শেষ লোকেশন ছিল। এরপরই পুলিশের তদন্তকারী দল সেখানে যায় এবং সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে।
সেই ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশের তদন্তকারী দলের সদস্যরা নিশ্চিত হন, এমপি আনার সেখানে গিয়েছিলেন এবং তিনি একাই সেখানে যান।
এরপরই এমপি আনারের ওই ফ্ল্যাটে ঢোকেন পরপর তিনজন। তারমধ্যে একজন নারীও ছিলেন। এই তিনজনকে আবার প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর বেরিয়েও যেতে দেখা যায়। এছাড়া ওই ফ্ল্যাটে ঢোকার জন্য তড়িঘড়ি করে একটি গাড়িও কয়েকবার আসা-যাওয়া করে।
জানা গেছে, সেই গাড়ির নম্বর ধরেই এখন তদন্ত চলছে। এছাড়া আরও কিছু অ্যাপ ক্যাবের নেটওয়ার্ক ও তার চালককে এরমধ্যেই আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন গোয়েন্দারা।
এদিকে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার খুনের ঘটনায় তিনজনকে আটক করার কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, ‘খুনের সাথে বাংলাদেশিরাই জড়িত।’
বুধবার (২২ মে) ধানমন্ডির বাসভবনে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি। এমপি আনার খুনের ঘটনায় ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে ফাটল ধরবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন,ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম ১২ মে চিকিৎসার জন্য দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান। ১৬ মে থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন তিনি।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম ১২ মে চিকিৎসার জন্য দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান। ১৬ মে থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন তিনি।
আনারের জন্ম ৩ জানুয়ারি ১৯৬৮ সালে। পেশায় ব্যবসায়ী আনার আওয়ামী লীগ কালীগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি তৃতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হন।
ঝিনাইদহ-৪ আসন থেকে তিনবার (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) নির্বাচিত আনার একজন ক্রীড়া সংগঠক এবং একসময়ের জনপ্রিয় ফুটবল খেলোয়াড়।
ছাত্রজীবন থেকে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ নিয়ে রাজনীতিতে শুরু করেন। স্থানীয় পৌরসভা নির্বাচনে কাউন্সিলর হিসেবে ভোটের রাজনীতি শুরু করেন তিনি। এরপর বিশাল ভোটের ব্যবধানে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়ী হন আনার। সবশেষ জাতীয় নির্বাচনগুলোতেও তিনি জয়ের ব্যবধান দিয়ে জনপ্রিয়তার স্বাক্ষর রাখেন।