নিহত ছাত্রলীগ নেতা আল আমিন।ছবি: সংগৃহীত
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে এক ছাত্রলীগ নেতাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমন খান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (৬ জুন) দুপুরে উপজেলার চন্দ্রা এলাকার ডাইনকিনি সড়কে শাহ মখদুম মার্কেটের সামনে প্রকাশ্যে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
নিহত ওই ছাত্রলীগ নেতার নাম আল আমিন হোসাইন (২০)। তিনি কালিয়াকৈর উপজেলার বরিয়াবহ গ্রামের মো. মোতালেব মিয়ার ছেলে। আল আমিন উপজেলার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কলেজের দ্বাদশ শ্রেণি ছাত্রলীগের সভাপতি এবং একই কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্র।
কলেজ কর্তৃপক্ষ, পুলিশ ও শিক্ষার্থীরা জানায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজে বুধবার কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আজাদ কামাল ওরফে সোহানের নেতৃত্বে উচ্চমাধ্যমিক পুরাতন দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিদায় অনুষ্ঠান ও র্যাগ ডে পালন করে। অনুষ্ঠানে শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দেয় সোহান ও তার সহযোগীরা। একপর্যায়ে তারা কলেজের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার জেরে বৃহস্পতিবার (৬ জুন) দুপুরে পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি ও কলেজের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইমন খান তার সহযোগী সাকিব হৃদয়, আকাশ ও হাসানসহ ১০ থেকে ১২ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে কলেজ মাঠে আল আমিন হোসাইন ও কামরুলকে দেখতে পেয়ে ধাওয়া দেয়। ধাওয়া খেয়ে আল আমিন ও কামরুল কলেজের পশ্চিম পাশে ডাইনকিনি সড়ক দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। এসময় শাহ মখদুম মার্কেটের সামনে গিয়ে মাটিতে পড়ে যায় আল আমিন। পরে হামলাকারী পৌর ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং ওই কলেজের শিক্ষার্থীরা এলোপাথাড়ি মারধর ও কুপিয়ে জখম করে। এসময় আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
স্থানীয়রা আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আল আমিনকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার খবর পেয়ে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কলেজের অধ্যাপক সুফিয়া বেগম বলেন, বুধবার শিক্ষার্থীদের আবেদনের ভিত্তিতে তাদের বিদায় অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। তবে কোন ধরনের র্যাগ ডে পালনের অনুমতি দেয়া হয়নি। সেই অনুষ্ঠানে কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। অনুষ্ঠানে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এর জের ধরেই শুক্রবার এক পক্ষের হামলায় কলেজের একজন ছাত্রকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
কালিয়াকৈর থানার ওসি এএফএম নাসিম জানান, কলেজের র্যাগ ডে পালনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের মধ্যে বিবাদের সৃষ্টি হয়। ওই বিবাদের জেরে একটি পক্ষের হামলায় এক ছাত্র নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। হত্যাকারীদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে এবং আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, এ ঘটনার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কালিয়াকৈর পৌর ছাত্রলীগ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কলেজ শাখার দ্বাদশ শ্রেণি ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সুলতান মো. সিরাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির মোড়ল স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় বিলুপ্ত করা হয়েছে।
সস/এম এইচ আর