হজরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (রহ.) মাজারের সিন্দুকে ৪৩ লাখ টাকা।ছবি:সংগৃহীত
বগুড়ার মহাস্থানে হজরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (রহ.) মাজারের সিন্দুকের (দানবাক্স) টাকা গণনা সম্পন্ন হয়েছে। দুদিনব্যাপী গণনা শেষে টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৩ লাখ টাকা। মাজার এলাকায় থাকা ৯টি সিন্দুক থেকে এই টাকা পাওয়া যায়। টাকা ছাড়াও স্বর্ণালংকার ও বৈদেশিক মুদ্রাও পাওয়া গেছে সিন্দুকগুলোতে।
মহাস্থান মাজার কমিটির সভাপতি বগুড়া জেলা প্রশাসকের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাহিয়ান মুনসীফের তত্ত্বাবধানে সোমবার (১০ জুন) থেকে শুরু করে মঙ্গলবার (১১ জুন) রাত পর্যন্ত টাকা গণনা করা হয়।
কর্তৃপক্ষ জানায়, মাজারের চারদিকে যে ৯টি সিন্দুক রয়েছে এরমধ্যে সোমবার সাতটি খোলা হয়। প্রথম দিন রাত ৮টা নাগাদ সাতটি সিন্দুকের টাকা-পয়সা গণনা সম্পন্ন হয়। এতে ১৩ লাখ ৬৪ হাজার ৪৮১ টাকা পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার সকালে খোলা হয় বাকি দুটি সিন্দুক। সেগুলো থেকে পাওয়া গেছে আরও ২৯ লাখ ৬৪ হাজার ৭৩০ টাকা। অর্থাৎ দুদিনের গণনায় মিলেছে ৪৩ লাখ ২৯ হাজার ২১১ টাকা। এ ছাড়াও ১৮টি স্বর্ণের নাকফুল, সৌদি রিয়াল, মালয়েশিয়ার রিঙ্গিত ও ব্রিটেনের পাউন্ড পাওয়া গেছে।
গত বছর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এসব সিন্দুক থেকে ২৩ লাখ ৮২ হাজার ২৯৬ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। সাধারণত তিন থেকে চার মাস পর পরই সিন্দুক খোলা হয়। তবে এবার ওরসের (বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়) কারণে দেরিতে সিন্দুক খোলা হয়েছে।
মহাস্থান উচ্চবিদ্যালয়ের ২০ জন শিক্ষার্থীর পাশাপাশি অগ্রণী ব্যাংক মহাস্থান শাখার ১২ জন কর্মকর্তা এবং মাজারে কর্মরত ১০ জন কর্মচারী টাকা গণনার কাজে অংশ নেন। এ সময় মাজার কমিটির সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
টাকা গণনার কাজে অংশ নেওয়া মহাস্থান উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইসরাফিল হোসেন বলেন, একসঙ্গে এত টাকা আগে কখনো দেখিনি। মাজারের টাকা বাছাই করতে ভালোই লাগে।
বগুড়া জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাহিয়ান মুনসীফ জানান, মাজার কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক তাকে সিন্দুক খোলা এবং তার ভেতরে জমা হওয়া টাকা-পয়সা গণনার জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন। এই প্রথম আমি কোনো মাজারের সিন্দুকের টাকা গণনার দায়িত্ব পালন করলাম। সিন্দুকের ভেতরে টাকা-পয়সা ছাড়াও চিঠি পাওয়া গেছে। তবে কাগজগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তা পড়া সম্ভব হয়নি।
মাজার কমিটির হিসাবরক্ষক ওবায়দুর রহমান জানান, মাজারের পাশে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কসংলগ্ন যাত্রীছাউনির ভেতরেও আগে দুটি সিন্দুক ছিল। মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করায় সেখানে এখন মাত্র একটি সিন্দুক রয়েছে। মাজারের চারদিকে আটটি সিন্দুক রয়েছে। যখন যে সিন্দুক খোলা হয় গণনা শেষে টাকা-পয়সাগুলো তৎক্ষণাৎ নির্ধারিত ব্যাংকে জমা রাখা হয়।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে মাজার কমিটির নামে ব্যাংকে প্রায় চার কোটি টাকা জমা আছে। এই টাকাগুলো মাজার এবং সংলগ্ন মসজিদের উন্নয়নের পাশাপাশি মাজার কমিটি পরিচালিত দাতব্য চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের জন্য ওষুধ কেনা এবং ইসলামী পাঠাগারের উন্নয়নে ব্যয় করা হয়।
মহাস্থান মাজার কমিটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাহেদুর রহমান জানান, ১৯৮৭ সাল থেকে জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে মাজার কমিটি পরিচালিত হচ্ছে। পদাধিকার বলে বগুড়া জেলা প্রশাসক মহাস্থান মাজার কমিটির সভাপতি। যখন সিন্দুকগুলো খোলার প্রয়োজন হয় তখন সভাপতির কাছে আবেদন করা হয়। এরপর তিনি এ কাজের জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেন। মূলত তার উপস্থিতিতেই মাজারের সিন্দুকগুলো খোলা এবং টাকা-পয়সা গণনা করা হয়। বিপুল টাকার মধ্য থেকে বিভিন্ন নোট বাছাইয়ের কাজে স্থানীয় স্কুলের শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা নেওয়া হয়।