শ্রমিকদের বেতন ও বোনাসের ১৯ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ছিনতায় চক্রের ৫ জনকে গ্রেপ্তার।ছবি:সময়ের সন্ধানে
গাজীপুরের শ্রীপুরে র্যাব পরিচয়ে শ্রমিকদের বেতন ও বোনাসের ১৯ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ছিনতায়ের ঘটনায় ডাকাত চক্রের মূলহোতা হামিম ইসলামসহ ৫ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। রাজধানীর রামপুরা, উত্তরা এবং গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে এক লাখ ৬১ হাজার ৯৭০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) দুপুরে র্যাব সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মিডিয়া উইং কমান্ডার আরাফাত ইসলাম এ তথ্য জানান।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো ভোলার লালমোহন উপজেলার শাহজাহান বারির ছেলে হামিম ইসলাম (৪৫), গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার মৃত আকবর আলীর ছেলে জিন্নাহ মিয়া (২৭), গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী এলাকার হাতেম আলীর ছেলে আমিন হোসেন (৩০), দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার ইউসুফ আলীর ছেলে রুবেল ইসলাম (৩৩) এবং গাইবান্ধার সাদুল্ল্যাপুর উপজেলার সিরাজুল ইসলামের ছেলে আশিকুর রহমান (৪২)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতিতে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস, দুইটি খেলনা পিস্তল, দুইটি র্যাব জ্যাকেট, দুইটি র্যাবের ক্যাপ, একটি হাতকড়াসহ নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততা থাকার কথা স্বীকার করে।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব কর্মকর্তা কমান্ডার আরাফাত ইসলাম জানান, ৬ জুন বিকেলে শ্রীপুরের নয়নপুর (দক্ষিণ ধনুয়া) সেলভো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কারখানার ৩ নম্বর গেটের সামনে ভুয়া র্যাব সদস্য পরিচয়ে ওই কারখানার ৩ কর্মকর্তাকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ ও জিম্মি করে। তাদের কাছ থেকে ওই কারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস ও ট্রাক ভাড়ার ১৯ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ছিনতাই করে। তারা র্যাবের জ্যাকেট পড়ে নিজেদের ভুয়া র্যাব পরিচয় দিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে কারখানার কর্মকর্তাদের জোরপূর্বক টয়োটা এক্স নোয়া গাড়িতে তুলে নিয়ে মারধর করে। পরে তাদেরকে নিয়ে গাজীপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরা করে ওইদিন সন্ধ্যায় শ্রমিকদের বেতন-বোনাসের টাকা রেখে কারখানা কর্মকর্তাদের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর সদর উপজেলার হোতাপাড়া এলাকায় ফেলে দেয়।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা স্বীকার করে তারা সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সদস্য। এই ডাকাত চক্রে ১০-১২ জন সদস্য রয়েছে। তারা ডাকাতি কাজে মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহন ব্যবহার করতো বলে স্বীকার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা গত ৩-৪ বছর যাবত বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভুয়া সদস্য পরিচয় দিয়ে গাজীপুর, টঙ্গী, উত্তরাসহ রাজধানীর পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতির কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। তারা নিজেদেরকে র্যাব, পুলিশ, ডিবি, সাংবাদিক ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভুয়া সদস্য পরিচয় প্রদানসহ ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত গাড়িতে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোগো সম্বলিত স্টিকার ব্যবহার করতো। ডাকাতির টাকা চক্রের সদস্যদের মাঝে নিজেরা ভাগাভাগি করে নিতো।
র্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, তাদের প্রধান হামিম গত ৩-৪ বছর পূর্বে ডাকাতি পেশায় জড়িয়ে পরে। পরবর্তীতে ডাকাতি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১০/১২ জনের একটি ডাকাত চক্র গড়ে তোলে। তার নির্দেশনায় চক্রের অন্যান্য সদস্যরা ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এলাকায় ডাকাতির টার্গেট নির্ধারণ করে তাকে তথ্য প্রদান করতো। পরে তার পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের নিকট হতে সুবিধাজনক স্থানে অর্থ ছিনতাই করতো। এছাড়াও সে পূর্বে একটি মামলায় কারাভোগের সময় কারাগারে থাকা দেশের বিভিন্ন এলাকার দুর্ধষ ডাকাতদের তার চক্রে অন্তর্ভুক্ত করে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। তাদেরকে শ্রীপুর থানায় হস্তান্তর করা হবে।