গাজীপুরের শ্রীপুরে বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ায় মো. শিপু (২৫) নামের এক যুবকের আত্মহত্যা ছবি:সংগৃহীত
গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলায় সপ্তাহখানেক আগে এক মেয়ের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয় মো.শিপু নামের এক যুবকের ।পারিবারিক মতামতে বিয়ের দিনও ধার্য করা হয়। এর পর বিভিন্ন কারণে সম্প্রতি ওই বিয়েটি ভেঙে যায়। এরপর থেকেই মানসিক চাপে ছিল সে। রোববার দুপুর ২টার দিকে সেই যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার হয়েছে।
গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা ইউনিয়নের সিংগারদীঘি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মো. শিপু (২৫) ওই গ্রামের সিরাজুল হকের ছেলে। ভেতর থেকে দরজা বন্ধ ঘরের আড়ার সঙ্গে ফাঁসিতে ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশটির খোঁজ মিলে। মরদেহের পাশে একটি চিরকুট পেয়েছে পুলিশ। সেখানে তার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয় বলে লিখা। পুলিশ ও স্বজনদের ধারণা, বিয়ে ভেঙে যাওয়ার অভিমান কিংবা হিনমন্যতারে কারণে ওই যুবক আত্মহত্যা করে থাকতে পারে।
পুলিশ ও স্বজনেরা জানান, এক সপ্তাহ আগে পাশ্ববর্তী কবরঘাটা এলাকার এক মেয়ের সাথে বিয়ের বিষয়টি চুরান্ত হয় শিপুর সঙ্গে।
কিন্তু কোনো এক কারনে সে বিয়ে ভেঙে যায়। এতে মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েন শিপু। রোববার সকাল থেকে শিপুর ঘরের দরজা বন্ধ ছিল। সবাই ভেবেছিল দরজা বন্ধ করে হয়তো শিপু ঘুমাচ্ছে। কিন্ত দুপুরে খাবার খাওয়ার জন্য দরজা না খোলায় সবার সন্দেহ হয়। তাকে বাইরে থেকে ডাকাডাকি করেন পরিবারের লোকজন। কিন্তু ভেতর থেকে শিপু সারা দিচ্ছিলেন না। দুপুর ২টা পর্যন্ত ডাকাডাকি করা হয়। এরপর পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পরে পুলিশ এলে দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করেন স্বজনেরা। তারা ঘরের আড়ায় মায়ের কাপড় পেচানো ঝুলন্ত অবস্থায় শিপুর নিথর দেহ দেখতে পান।
লাশের পাশে পাওয়া ৮ পৃষ্ঠার চিরকুটে শিপু লিখেন, ‘ আমার মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী। দয়া করে আমাকে কাটাকাটি মানে পোস্টমর্টেম করবেন না। কারণ , আমি নিজেই মারা গেছি। ‘চিরকুটে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বারবার পোস্টমর্টেম না করার অনুরোধ করেন তিনি।
চিরকুটের অন্য অংশে তিনি তার ভাইয়ের সন্তানদের সম্পর্কে লিখেন, ‘ আমার ভাসতী তানিশা ও আনাস আমার অনেক আদরের ছিল। তাদেরকে মাদ্রাসায় পড়াবা।’ চিরকুটের অন্য অংশে লিখেন, ‘ ভাবি, বাবা মার প্রতি আপনি খেয়াল রাখবেন। ‘ চিরকুটে লিখা, ‘ বাবা-মা তোমরা আমাকে মাফ করে দিবা। আমার জন্য কানবা না। আমার ঘরে নামাজ পড়ে আমার জন্য দোয়া করবা। আমার ঘরে তোমরা থাকবা। ‘তিনি লিখেন, ‘আমার মানিব্যাগে কিছু টাকা আছে। আর দোকানে কিছু টাকা পাব। সব টাকা মিলিয়ে এতিমদের নিয়ে মিলাদ দিও। আমার কবর দিও যেখানে ভালো হয় । ‘চিরকুটে লিখা, ‘বাবা, তুমি শরীরের প্রতি খেয়াল রাখবা। পরিবারের সবাই মিলিমিশ করে থাকবা। কারো সঙ্গে ঝগড়া করবা না। ‘নিজের মোবাইল তার ভাইকে ব্যবহার করার অনুরোধ জানিয়ে শিপু লিখেন, ‘আমার মোবাইল তুমি নিপু ভাই চালাইবা। ঈদ আসলে তুমি সবাইকে নতুন কাপড় কিনে দিবা ।’ নিজের মৃত্যু পরবর্তী গোসল সম্পর্কে তিনি চিরকুটে লিখেন, ‘আমাকে ভালোভাবে গোসল করিয়ে জানাজা দিবেন। এটা আমার অনুরোধ।'
মাওনা পুলিশ ফাঁরির ইনচার্জ মশিউর রহমান সময়ের সন্ধানে বলেন,'খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছি। অভিমান করে আত্মতহ্যা করেছে বলেই মনে হচ্ছে। এ ছাড়া লাশের পাশে চিরকুট পাওয়া গেছে। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এবং স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লাশ বিনা ময়নাতদন্তে স্বজনদের দেওয়া হয়েছে।'