৭০ লাখ টাকায় ক্রসফায়ার থেকে রক্ষা পেলেন শ্রমিক দল নেতা,আদালতে মামলা। ছবি:সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক:
৭০ লাখ টাকার বিনিময়ে নিজের জীবন বাঁচান শ্রমিক দল নেতা কাজল ফকির। আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) থাকাকালীন ওই নেতাকে রিমান্ডে নিয়ে ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে ৭ কোটি টাকা দাবি করেন হারুন। পরে ৭০ লাখ টাকায় দফারফা হয় কাজল ফকিরের জীবনের।
কাজল ফকির গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার শিল্পাঞ্চল শ্রমিক দলের সভাপতি। গত ১৬ অক্টোবর তিনি নিজে বাদী হয়ে গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় গাজীপুরের তৎকালীন এসপি হারুন অর রশিদ, ঢাকা মহানগরের উত্তরা পশ্চিম থানার ৩নম্বর সেক্টরের আবুল হোসেনের ছেলে হুমায়ুন কবীর এবং শ্রীপুর পৌরসভার চন্নাপাড়া এলাকার মৃত হাছেন আলীর ছেলে আব্দুল মালেকসহ অজ্ঞাতনামা আরো ১০/১৫ জনকে বিবাদী করা হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বিগত ২০১৭ সালের পহেলা মে আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে সাদা পোশাকে ১০/১৫ জন লোক এসে মামলার বাদীকে তার মাওনা চৌরাস্তার নিজ বাড়ি থেকে একটি হায়েজ গাড়িতে তুলে গাজীপুর এসপি অফিসে নিয়ে যায়।
পরে, পুলিশ সুপারের অফিস কক্ষে নিয়ে তৎকালীন পুলিশ সুপার মামলার ১নং বিবাদী হারুন অর রশিদ মাওনা চৌরাস্তার মুলাইদ মৌজার সিএস-৫৮, এসএ-১৭৮, আরএস-১৯০ ও এসএ-৩৪০ আরএস-১৬৫১, শাইল ৩.২৯৬ একর জমি ২ নং বিবাদী নামে লিখে দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। পড়ে অস্বীকৃতি জানালে পুলিশি প্রভাব খাটিয়ে জয়দেবপুর থানায় মামলা দিয়ে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে দশ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। পরে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। ওরে বাঁদিকের রিমান্ডে নিয়ে ১নং বিবাদী তৎকালীন এসপি হারুন অর রশিদ বাঁদিকে বলেন ২ নং বিবাদীর নামে বর্ণিত জমি রেজিস্ট্রি করিয়া দিতে হবে। নয়তোবা সাত কোটি টাকা দিতে হবে। অন্যথায় ক্রসফায়ার দেওয়া হবে। পরে নুরুল আমিন ও সুলতান উদ্দিন এর মাধ্যমে ৭০ লাখ টাকা আটক করার দুইদিন পর রাত আটটার দিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে তৎকালীন তৎকালীন পুলিশ সুপার মামলার ১ নং বিবাদী হারুন অর রশিদ এবং ২ নং বিবাদী হুমায়ুন কবিরের হাতে দেওয়া হয়। ৭০ লাখ টাকা দেওয়ার পর ক্রসফায়ার থেকে রক্ষা পান মামলার বাদী। পরবর্তীতে বিভিন্নভাবে হামলা মামলা ও হয়রানি করে আসছিল বিগত সাত আট বছর যাবত।
গত ৫ আগস্টে ছাত্র জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর উল্লিখিত আসামিগণ পলাতক হইলে বাদী তার নিজ দখলীয় জমিতে ফিরে আসে।
মামলার বাদী কাজল ফকির জানান, আমার মামলার ১নং বিবাদী গাজীপুরের তৎকালীন পুলিশ সুপার হারুন তার পুলিশি ক্ষমতা খাটিয়ে আমাকে আমার মাওনা চৌরাস্তার বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে মামলা দিয়ে আদালতের দমে জেল হাজতে পাঠিয়ে পরে রিমান্ডে এনে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে সাত কোটি টাকা দাবি করে। আমি তখন জীবন রক্ষা করতে ৭০ লাখ টাকা এসপি হারুনকে দেই। ৭০ লাখ টাকার বিনিময়ে আমার প্রাণ রক্ষা হয়। এসপি হারুন এবং হুমায়ুন কবিরকে সহযোগিতা করেছেন মাওনা চৌরাস্তার সাংবাদিক মালেক। এই মালেকের প্ররোচনায় এসপি হারুন তার পুলিশি বাহিনী দিয়ে আমাকে এবং আমার পরিবারের লোকজনকে বিভিন্নভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন করেছে।
তিনি আরো জানান, আমি বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত সেজন্যই আমার জমিজমা সবকিছুই জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছিল এসপি হারুনের বাহিনী। বিগত সময়ে আমি আমার বাড়িতে ঘুমাতে পারিনি গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছি সবসময়। আমি বর্তমান সরকারের কাছে সঠিক তদন্ত করে দোষীদের বিচার দাবি করছি।
এ বিষয়ে জানতে গাজীপুরের সাবেক এসপি হারুন অর রশিদ এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। কারণ গত ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে তিনি গাঁ ডাকা দিয়েছেন।