The woods are dark and deep,
But I have promises to keep
And miles to go before I sleep
And miles to go before I sleep…..
-Robert Frost
চিরনিদ্রায় শায়িত হবার আগে তিনি অনেক পথ হেঁটেছেন ক্লান্তিহীন, আর নির্মাণ করেছেন প্রজ্ঞা, পরিমিতি ও মানবিক ঐতিহ্যের আলোকিত ভুবন। সভ্যতা ও সংস্কৃতির যাত্রায় যে-বোধি মানুষকে মানব করে তোলে তিনি তাকেই খুঁজেছেন জীবনভর। জীবনের প্রতিটি বাঁকে তাঁর এ ধারণা স্বচ্ছ আর অমলিন ছিল যে, জীবন মাত্র একটাই এবং তা তখনই অমরতা দাবি করতে পারে, যখন এ জীবন স্বার্থহীনভাবে, নিঃসঙ্কোচে উৎসর্গীকৃত হয় কল্যাণ আর মানবতার বেদীমূলে।
তিনি ছিলেন নিষ্ঠাবান শিক্ষক, অকুতোভয় জনপ্রতিনিধি, স্বাধীনতা সংগ্রামে নিবেদিত সংগঠক, যোদ্ধা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ ও বিশ^স্ত সহচর, জাতীয় রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি জাতীয় ব্যক্তিত্বদের সান্নিধ্যে তিনি সমৃদ্ধ হয়েছেন এবং নিজেকে শাণিত করেছেন।
কোন চাপ, লোভ, ভয়, ভীতি তাঁকে তাঁর আদর্শ থেকে চ্যুত করতে পারেনি কখনো। তাঁর ছাত্ররা, রাজপথের সহযোদ্ধারা, এলাকার বিভিন্ন ধর্মের, পেশার মানুষেরা, চলার পথের সহকর্মীবৃন্দ যাঁরাই তাঁর সংস্পর্শে এসেছেন, তাঁর প্রখর ব্যক্তিত্ব, নির্লোভ মানসিকতা ও সততায় মুগ্ধ হয়েছেন।
যে-ক’জন শুদ্ধ রাজনীতিবিদের কারণে রাউজান প্রগতি, স্বাধীনতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় জননন্দিত হয়েছে, ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এ.কে ফজলুল হক তাঁদের অন্যতম। প্রচারবিমুখ, জনারণ্য এড়িয়ে চলা এই মানুষটি সামন্ততান্ত্রিক আভিজাত্যকে ভেঙেছেন। নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে সত্য ও ন্যায়কে প্রতিষ্ঠিত করেছেন কাজে ও প্রতিজ্ঞায়। তাঁর জীবন মহত্ত্বে ভাস্বর। নিয়েছেন খুব সামান্য, দিয়েছেন নিজেকে উজাড় করে তাঁর সকল মেধা, শ্রম। এই দীপ্র মানবাত্মার প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিবেদন করছি তাঁর ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকীতে।
ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এ.কে ফজলুল হক চেয়ারম্যানের সাথে আমার সাক্ষাতের সৌভাগ্য হয়নি।
তাঁর ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত জনপদের জননায়ক শীর্ষক প্রকাশনায় বিভিন্ন বিদগ্ধজনের স্মৃতিচারণে এই মণিষা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভের চেষ্টা করেছি। ওই প্রকাশনা তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এবি তাজুল ইসলাম (অব.) ও তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মিজানুর রহমানের বাণীতে সমৃদ্ধ হয়েছে। এছাড়া, বাংলাদেশ গণপরিষদ সদস্য ও দৈনিক আজাদীর সম্পাদক শুদ্ধবিবেক অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের একটি প্রত্যয়ন পত্রও প্রকাশনাটিতে মুদ্রিত হয়েছে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এমপি, তৎকালীন মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী ইনামুল হক দানুও অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে এই ধীমান রাজনীতিককে যথাযথ মূল্যায়ণের চেষ্টা করেছেন। তাঁর জীবন কাহিনী নিয়ে বিস্তারিত স্মৃতিচারণ করেছেন মুক্তিযুদ্ধকালীন রাউজান থানা মুজিব বাহিনী প্রধান কবি-কলামিস্ট শওকত হাফিজ খান রুশ্নি। বর্ষিয়ান সাংবাদিক ও একুশের কালজয়ী গানের স্রষ্টা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বন্ধু সম্পর্কে করেছেন অসাধারণ স্মৃতিচারণ। ঔপন্যাসিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ‘বঙ্গবন্ধুর বন্ধু, অসাম্প্রদায়িক ফজলুল হক’ শিরোনামে লিখেছেন দুর্দমনীয় কথামালা। সাবেক এমএনএ আবু ছালেহ, সাবেক ডেপুটি স্পীকার ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত কর্ণেল অব. শওকত আলী ও চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. আবু ইউসুফ আলম, সাবেক সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল নুরুদ্দিন, সংসদ সদস্য শেখ সেলিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা জামাল আহমেদ প্রকাশ-মো. ফকির জামাল প্রমুখ নেতৃবৃন্দ বিভিন্নভাবে ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এ.কে ফজলুল হক চেয়ারম্যানের বীরত্বগাঁথা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান তাঁর বাণীতে ফজলুল হকের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কীর্তিমান সংগঠক ও রাউজান থানা আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, ১১নং পশ্চিম গুজরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এ.কে ফজলুল হক-এর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে সেজন্য স্মরণসভা পর্ষদকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মৃত্যুর পূর্ব তথা ১৯৮৭ পর্যন্ত দেশের সব ক’টি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ৬ দফা আন্দোলন, আগরতলা মামলা বিরোধী আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণআন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন এবং একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলনে তাঁর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ছিলো। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের নির্ভীক অনুসারী জননেতা এ.কে ফজলুল হক সারাজীবন সাধারণ জনগণের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে এবং জাতির ক্রান্তিলগ্নে তাঁর গৌরবোজ্জ্বল অবদান দেশের মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে এবং তাঁর ন্যায়নিষ্ঠ, সৎ, ত্যাগী, পরিচ্ছন্ন ও আদর্শবাদী চেতনা নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে সময় বিশেষ প্রকাশনার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘জাতির পিতার আদর্শের একনিষ্ঠ সৈনিক হিসেবে ধীমান রাজনীতিক মরহুম এ.কে ফজলুল হক চেয়ারম্যান তাঁর সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে সুস্থ, গণতান্ত্রিক এবং আদর্শের রাজনীতির চর্চা করেছেন। তিনি আমৃত্যু দেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণে নিবেদিত ছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তৃণমূলের একজন নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে তিনি সুস্থ ও শুদ্ধ রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।’ প্রধানমন্ত্রী একজন সৎ, ত্যাগী, আদর্শবান, দেশপ্রেমিক রাজনীতিক হিসেবে তাঁর পুণ্যস্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাও জানান।’
বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী তাঁর পরম হিতৈষী, বন্ধুপ্রতিম শিক্ষক, নন্দিত রাজনীতিবিদ, জাতির পিতার ঘনিষ্ঠজন, নিঃস্বার্থ সমাজহিতৈষী এ.কে ফজলুল হক চেয়ারম্যানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘প্রয়াত বন্ধুবর এ.কে ফজলুল হক-এর পিতা উত্তর চট্টগ্রামের প্রসিদ্ধ শিক্ষাবিদ বড় মাস্টার খ্যাত ওছমান আলী মাস্টার একজন খ্যাতিমান ব্যক্তি ছিলেন। দেশের জনসাধারণের শিক্ষা ও সেবার মনোবৃত্তি নিয়ে তিনি কাজ করেছিলেন। ফজলুল হক তাঁর পিতাসহ অন্যদের মহৎ কাজের দ্বারা উৎসাহিত, উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত হবেন সেটাই স্বাভাবিক। তাঁর জীবন আলোচনা করলে আমরা দেখি, তিনি গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন, এবং প্রথম জীবনে শিক্ষকতার ব্রত গ্রহণ করে মানুষের অন্তরে জ্ঞানের মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ¦ালনের চেষ্টা করেছিলেন। মানুষের সেবায় ব্রতী হয়ে তিনি দীর্ঘ বহু বৎসর নিজ ইউনিয়ন ১১নং পশ্চিম গুজরার প্রেসিডেন্ট, চেয়ারম্যান ছিলেন। তবে আদর্শ তিনি অমরণ বিসর্জন দেননি। এ.কে ফজলুল হকের মধ্যে সবসময় মহৎ কাজের অনুপ্রেরণা লক্ষ্য করেছি। তিনি তো মহৎ মৃত্যুর জন্য তৈরি হচ্ছিলেন এবং হাসিমুখে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন।
তিনি তীক্ষ্ম বুদ্ধি, অসীম সাহস, দেশপ্রেমসহ বহু গুণে গুণান্বিত ছিলেন। তাই এখনো মানুষের মনে দেদীপ্যমান তিনি। মৃত্যুমুখে বার বার পতিত হয়েও স্বীয় গুণে অমরত্ব লাভ করে ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে নাম লিখিয়েছেন নিজ বিজ্ঞতায়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তাঁর প্রীতির সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো। তাঁরই ঘনিষ্ঠ বন্ধু স্বাধীনতা সংগ্রামী ভূপতি ভূষণ চৌধুরী প্রকাশ মানিক চৌধুরীর ব্যবসা-বাণিজ্যের সংযোগে ফজলুল হক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। প্রসঙ্গত: শেখ সাহেবের দুর্দিনে অর্থ কষ্টে যে ক’জন ত্যাগী কর্মী সবসময় তাঁর পাশে থেকে সাহস-সহযোগিতা করেছেন মানিক বাবু তাঁদের অন্যতম।
ফজলুল হক ছিলেন সে সময়ে অন্যতম বাহকের ভূমিকায়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ফজলুল হক অভিযুক্তদের পক্ষে অনন্য ভূমিকায় অবতীর্ণ ছিলেন।
তৎকালীন রাষ্ট্রীয় নেতা মাওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গেও তিনি সে সময় ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখেছিলেন এবং সে সময়কার সকল রাজনৈতিক আন্দোলনের সাথে তথা সর্বশেষ ছয় দফা আন্দোলন ও সত্তরের নির্বাচন প্রভৃতির সাথে জড়িত থেকে দেশবাসীকে পাকিস্তানি হায়েনার বিরুদ্ধে সংগঠিত করার সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ফজলুল হক।’
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক মন্ত্রী সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এ.কে ফজলুল হককে একজন অমায়িক, পরোপকারী, সজ্ঞান ভদ্র মানুষ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, ‘এ.কে ফজলুল হক গুণগতমানসম্পন্ন রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন। নীতিবোধসম্পন্ন রাজনীতির প্রতিষ্ঠায় তিনি সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার পরিপক্ব বিবেচনা প্রসূত রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি নীরবে আসল কাজটি সমাধা করতেন। আমি যতোবারই রাজনৈতিক সফরে চট্টগ্রামে গিয়েছি, ততোবারই তার অমায়িক ও সরল ব্যবহারে মুগ্ধ হয়েছি। বিভিন্ন রাজনীতিকের এবং কর্মীদের পদচারণায় মুখর ছিল বঙ্গবন্ধুর বাড়ি। তিনি বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য পেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আদর-মমতাসিক্ত হয়েছিলেন। চট্টগ্রামে তিনি বঙ্গবন্ধুর বহুমাত্রিক কর্মযজ্ঞের গুরুত্বপূর্ণ বাহক ছিলেন। চলমান জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে তিনি ছিলেন একজন সচেতন মানুষ। বঙ্গবন্ধু তাঁকে অপার স্নেহে রেখেছিলেন। আমৃত্যু তিনি সে স্নেহের দাম দিয়ে গেছেন। তাঁর মতো শান্ত, ধীর, স্থির এবং ধীমান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এ জীবনে খুব কমই দেখেছি।’
সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী আওয়ামী রাজনীতি শুদ্ধ কুশিলব এ.কে ফজলুল হক চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে যাওয়ার সুযোগের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন ও ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের সময়ে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের মিছিল সমাবেশে আমি তাঁর সাথে ছিলাম। সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৬ দফা কর্মসূচিকে নির্বাচনী অঙ্গীকার ঘোষণা করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণকালে রাউজানে জাতীয় পরিষদে অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ এবং প্রাদেশিক পরিষদে আব্দুল্লাহ আল-হারুণ চৌধুরীকে মনোনয়ন দিয়ে নির্বাচনী প্রচার শুরু করলে জননেতা এ.কে ফজলুল হক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের জেতানোর পক্ষে সব ধরনের কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার পর তাঁর বীরোচিত সংবর্ধনা সভায় নিঃসঙ্কোচে যে ক’জনের নাম উল্লেখ করেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এ.কে ফজলুল হক তাঁদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি পর্বে চট্টগ্রামে গঠিত ‘জয় বাংলা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী’র উপ-প্রধান হিসেবে আমি নানা সময়ে তাঁর সু-পরামর্শ গ্রহণ করেছি।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ও প্রজ্ঞাময় রাজনীতিক হিসেবে অভিজ্ঞতা ও কর্মদক্ষতার গুণে তিনি উত্তর জেলা আওয়ামী লীগে নিয়ামক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। পরবর্তী সময়ে বহুমুখী প্রলোভন উপেক্ষা করে সমস্ত লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে ওঠে সংগ্রাম, ত্যাগ, তিতিক্ষার মাঝে রাজনীতির ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে জনমুখী করতে আমৃত্যু কাজ করে গেছেন।’
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কালজয়ী বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী ইনামুল হক দানু স্মৃতিচারণে বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর চট্টগ্রামে ডান এবং বাম হাত এম.এ আজিজ ও জহুর আহমদ চৌধুরীর বিশ^স্ত ভ্যানগার্ড জননেতা মরহুম এ.কে ফজলুল হক চেয়ারম্যানের সাথে আমার অজস্র স্মৃতি।
‘বইপোকা’ হিসেবে পরিচিত এই সজ্জন রাজনীতিবিদের সাথে নানা সময়ে অন্য সিনিয়রদের অকাট্য যুক্তি-তক্কে আমি সব সময় লাভবান হয়েছি। জীবনঘনিষ্ঠ অনেক বিষয় জেনেছি তাঁর কাছে। শিখেছি প্রচুর। মোনায়েম খানকে জুতা মারার কারণে শ্রদ্ধেয় ফজলুল হক আমাকে আলাদা চোখে দেখতেন এবং রাজনীতিতে অনুজ হওয়া সত্ত্বেও সম্মান করতেন। এটি অবশ্য ঠিক, তিনি সিনিয়রদের যথাযথ সম্মান এবং জুনিয়রদের অপত্য স্নেহে আবদ্ধ রাখতেন। রাউজানের একটি অজপাড়াগাঁ থেকে উঠে আসা এই তরুণ তুর্কির সাথে কেন্দ্রের অনেকেই সু-সম্পর্ক বজায় রাখতেন সে সময়ে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরাসরি স্নেহসিক্ত জনাব ফজলুল হক মূলধারার আওয়ামী রাজনীতির অগ্রগণ্য পুরুষ ছিলেন। তিনি নেতা হওয়ার চেয়ে নেতা বানাতে পছন্দ করতেন। নিজে পদধারী না হয়ে অন্যদের পদায়ন করতে সচেষ্ট ছিলেন সবসময়। আকর্ষণীয়, মোহনীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী এই জাত রাজনীতিক বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রশ্নে আমৃত্যু আপসহীন ছিলেন। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি চর্চায় তাঁর অনন্য অবদান সর্বজনস্বীকৃত।’
কবি-লেখক, কলামিস্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত হাফিজ খান রুশ্নি তাঁর দীর্ঘ কথামালায় ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এ.কে ফজলুল হক-এর পূর্ণাঙ্গ জীবনী তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। তিনি তাঁর তীক্ষ্মধী কলামে সেই সত্য উচ্চারণ করেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতিভাসে এ গরীয়ান ঐশ^র্য্য অসংখ্য সূর্যের আলোময় সম্ভাবনায় প্রোজ্জ্বল। আর এ প্রোজ্জ্বল অভিব্যক্তির ব্যনজনাকে ধারণ করেই বীর নগরী চট্টগ্রামের রাউজানের অকুতোভয় বীর, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, চট্টগ্রাম জেলা ও রাউজান থানা আওয়ামী লীগের অন্যতম কীর্তিমান সংগঠক, ১১নং পশ্চিম গুজরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান এবং যুদ্ধকালীন মুজিব বাহিনী প্রধান, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী, রাউজানে সমবায় আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা, ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এ.কে ফজলুল হক চেয়ারম্যানের সংগ্রামী জীবনের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করছি নত মস্তকে। তাঁর জীবনের মর্মবাণীই ছিলো-‘বীর বাঙালি আত্মসমর্পণ করতে পারেনা; পারেনা পরাজিত হতে।’
দূরদর্শী এবং অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তিনি ছিলেন আপামর কর্মীদের আশ্রয় ও ভরসাস্থল। আজ এতোদিন পরে বলতে দ্বিধা নেই, তাঁর উদারতায় প্রাণে বেঁচেছে আমাদের অনেক মূল্যহীন প্রাণও। ফজলুল হক মামা চাইলেই মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তী সময়ে অনেক কিছুই করতে পারতেন। কিন্তু নীতি-আদর্শ বিসর্জন দেয়ার জন্য তাঁর জন্ম হয়নি। তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে দলের ভেতরে-বাইরেও। তিনি সব জানতেন, ভালো কাজের মধ্য দিয়েই যে কোন কিছুর জবাব দেয়ায় তিনি অনন্য ছিলেন। শত ষড়যন্ত্রেও টলানো যায়নি তাঁকে। তাঁর উদারপন্থার কারণে জীবদ্দশাতেই অনেকবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন। সততার কারণে বেঁচে গেছেন। তাঁকে কেউ দাবায়া রাখতে পারেনি। এখানেই ইতিহাসের এই প্রোজ্জ্বল নায়কের অমরত্ব।
চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার উত্তর গুজরা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসিলম পরিবারে ১৯৩২ সালের ১৭ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন সময়ের সাহসী সন্তান এ.কে ফজলুল হক। তাঁর পিতার নাম আলহাজ¦ ওছমান আলী মাস্টার। রাউজানবাসীর নিকট তিনি নিরব অধ্যাত্মিক সাধক ‘বড় মাস্টার’ নামে পরিচিত ছিলেন। ৫ ভাই ৪ বোনের মধ্যে হক সাহেব ছিলেন দ্বিতীয়। পিতা মাস্টার সাহেবের বহুমুখী কর্মযজ্ঞের ধারাবাহিকতায় হক সাহেবও সমাজের প্রতিটি মানুষের নিকট ছিলেন অতি আদরণীয়। স্থানীয় ঈদগাহ প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে একসময় তিনি বিনাজুরী নবীন উচ্চ বিদ্যালয় ও আবুরখীল অমিতাভ উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করে ১৯৪৭ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে পিতার পদাংক অনুসরণ করে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। কাগতিয়া প্রাইমারি স্কুলে যোগদান করে নিজের কর্মজীবন শুরু করেন।
যাঁর দৃষ্টি, চিন্তা, চেতনা আকাশের বিপুলতাকে ছুঁয়ে যেতে চায় তিনি কি এক জায়গায় আবদ্ধ থাকতে পারেন? ১৯৪৮ সালে তিনি ঢাকা কলেজে এবং ১৯৫০ এ ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
একসময় তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। তার বেশ কিছুদিন পর হক সাহেব বদলি হয়ে কক্সবাজার চলে যান। সেখানে দীর্ঘদিন চাকরি করার পর ১৯৬৫ সনের পাক-ভারত যুদ্ধের সময় চাকরি ছেড়ে দিয়ে পুরোদমে রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন।
১৯৬৫ সাল থেকেই ১১নং পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নবাসী তাঁকে কমান্ডার হিসেবে জানতেন এবং মানতেন। কেননা পাক-ভারত যুদ্ধের সময় হক সাহেব পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের শতাধিক যুবককে সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য মগদাই বাজার সংলগ্ন ইউনিয়ন পরিষদের সামনে জড়ো করে ট্রেনিং দিতেন। আজো তাঁর গুরুগম্ভীর কণ্ঠের লেফ্ট-রাইট, লেফ্ট-রাইট শব্দের প্রতিধ্বনি ইউনিয়নবাসীর হৃদয়ে গেঁথে আছে।’
ভাষা সৈনিক মাহবুব-উল-আলম চৌধুরীর স্মৃতিচারণে জানা যায়, ‘১৯৫০ সালে আণবিক বোমা নিষিদ্ধকরণের দাবিতে গঠিত বিশ^শান্তি পরিষদের চট্টগ্রাম শাখায় তাঁদের সাথে ফজলুল হক ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। ১৯৫১ সালে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান সংস্কৃতি সম্মেলনে তিনি অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা এবং সাংগঠনিক সম্পাদক। ফজলুল হক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হলেও বিরামহীন কাজ করেছেন এবং ১৯৫৪ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান সংস্কৃতি সম্মেলনে মাহবুব-উল-আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে তিনিও যোগ দেন।’
সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান-এর বয়ানে আমরা জানতে পারি, ‘১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণকালে এ.কে ফজলুল হকের সাথে আমার পরিচয়। পরবর্তীতে সখ্যতা। সেই সখ্যতা আরো প্রগাঢ় হয় ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ে যোগদানের মধ্য দিয়ে।’
তিনি বলেন, ‘১৯৬৯ থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত চট্টগ্রামে অবস্থানকালে ফজলুল হক সাহেবের সাথে আমার নিবিড় বন্ধুতা চলমান ছিলো। এর মধ্যে যুদ্ধকালীন তথা ১৯৭১ সালের ৩১ মার্চ আমরা কুণ্ডেশ^রী ভবনে আশ্রয় গ্রহণ করি। সে সময়ে তাঁর গ্রামের বাড়ি পশ্চিম গুজরায় বেশ ক’বার যাওয়া-আসা করেছি নানাভাবেই। আমাদের অনেকেই তাঁর সাথে গভীর যোগাযোগ রাখতেন। তিনি পরম বন্ধুবৎসল এবং আড্ডাপ্রিয় মানুষ ছিলেন। যুদ্ধকালীন রাউজানে তাঁদের বাড়ি ‘ওছমান আলী মাস্টার বাড়িতে ছিলো স্বীয় ইউনিয়নের প্রধানতম সেল্টার হাউস। তিনি সেল্টার মাস্টার হিসেবে রাউজানে স্ব-নামে খ্যাত ছিলেন। নিজেদের বাড়ি ছাড়াও হাটহাজারী-রাউজানের অসংখ্য সেল্টার হাউস তাঁর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আওয়ামী রাজনীতি এবং বহুমাত্রিক সমাজকর্মে নিজেকে নিবেদিত রেখেছিলেন ফজলুল হক।
ভাষাসৈনিক, রাজনীতিক ও প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠক ও লেখক অ্যাডভোকেট গাজীউল হক বলেন, ১৯৫১ সালে যখন পূর্ব পাকিস্তান গণতান্ত্রিক যুবলীগ আমরা গঠন করি সে সময়ে এ.কে ফজলুল হক আমাদের কাছে আসেন এমএ ওয়াদুদ-এর একজন একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে এবং ঐ বছরই যুবলীগের প্রতিষ্ঠাকালেই তাঁর সাদামাটা কথা, আন্দোলনের প্রতি ঐকান্তিকতায় আমরা মুগ্ধ হই। পরবর্তীতে ওয়াদুদ-এর সাথে প্রায় নিয়মিতই তাঁকে আমরা নানা কাজে পেয়েছি নিঃস্বার্থভাবে। মূলত: ভাষাবীর এবং রাজনীতিক এমএ ওয়াদুদ পাটোয়ারীর ঘনিষ্ঠ এবং ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র হিসেবে ফজলুল হক আমাদের চলার পথে অকৃত্রিম বন্ধু হয়ে ওঠে। সেই দুর্দান্ত সময়গুলিতে এবং পরবর্তীতে নানা দুঃসময়ে এ.কে ফজলুল হক ছিলেন অনেকের কাছে অনেকটা নির্ভরতার প্রতীক।
ভাষা বীর ও রাজনীতিক এমএ ওয়াদুদ-এর স্মৃতিচারণে জানা যায়, ‘১৯৫৩ সালের শুরুতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের কাউন্সিল অধিবেশনে (১৯৪৮ সালের জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠার পরে সেটাই ছিলো সংগঠনের প্রথম কাউন্সিল অধিবেশন) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হয়ে ইত্তেফাকে কাজ করছি পুরোদমে। একদিন শিল্পী মুর্তজা বশীরসহ চট্টগ্রামের এ.কে ফজলুল হক এলো অফিসে। দীর্ঘসময় স্মৃতিচারণ চললো। অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে সে বললো, ‘ওয়াদুদ ভাই, ছাত্রলীগের সাংগঠনিক তৎপরতায় এবং ইত্তেফাকের প্রকাশনা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে আপনি জীবনের যে মূল্যবান সময় ব্যয় করেছিলেন আপনার সেই আত্মত্যাগ এবং কর্মনিষ্ঠার যথাযথ মূল্যায়ন হয় নি। যাঁদের করার কথা ছিলো তাঁরা তা করেন নি। আমি অশ্রুসজল চোখে তার কাঁধে হাত রেখে বলেছিলাম, মূল্যায়নের অভিপ্রায়ে আমি যেমন কিছু করিনি, তুমিও তো তাই।’
জ্ঞানতাপস ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র ঘনিষ্ঠ বন্ধু হযরত আলহাজ¦ ওছমান আলী মাস্টারের সুযোগ্যপুত্র এ.কে ফজলুল হক পারিবারিক সম্পর্কে শিল্পী মুর্তজা বশীরের ছোটবেলার বন্ধু ছিলেন।
খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর এ.কে ফজলুল হক সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘সে ছিলো আমার ছোটবেলার বন্ধু। আমার বাবার সাথে মাস্টার সাহেবের (ওছমান আলী মাস্টার) ঘনিষ্ঠ বন্ধুতা আমাদের মাঝেও বহমান ছিলো।
১৯৫০ সালে আমি তখন ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। ফজলু ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হবে। একসাথে থাকি-খাই-আড্ডায় সময় কাটে। সে সময় হাজং বিদ্রোহ চলাকালে আমারই আঁকা পোস্টার ছিড়ে যাওয়ায় জোড়া লাগাতে গিয়ে পুলিশের কাছে গ্রেফতার হলাম। চরম নির্যাতন ভোগ করি। আমার বন্ধুও গ্রেফতার। বিনাদোষে সে কারাভোগ করলো আমার সাথে। এটি এখনো আমাকে কষ্ট দেয়। দু’বন্ধু ভাষা আন্দোলনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হই। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি গুলিবিদ্ধ বরকতসহ অন্য সহযোদ্ধাদের সাথে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের অনেক বন্ধুর মধ্যে ফজলুল হক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১৯৭১ সালের ৪ নভেম্বর আমি সপরিবারে ফ্রান্সে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ফজলুর সাথে নিবিড় যোগাযোগ ছিলো। মাঝখানে বন্ধ। সে তখন প্রচন্ড ব্যস্ত সময় অতিক্রম করছে।
১৯৭৩ সালের জুনে দেশে ফিরি এবং আগস্টের ১ তারিখে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় চারুকলা বিভাগে যোগ দিই। তারপর আবার বন্ধুতায় ভাসি আমরা। রাজনীতি তাঁকে জননন্দিত করলেও তার সহযাত্রী অনেকেই ঈর্ষার চোখে দেখতো। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ তাকে যে গুরুত্বের চোখে দেখতো সেটিই চক্ষুশূল হয়েছিলো ফজলুর জন্য। পরবর্তীতে নিজ দলের অনেকেই ভেতরে ভেতরে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। অনেকবার বলেও বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছি, বঙ্গবন্ধুকে বিষয়গুলি খোলামেলা জানাতে।’
আজাদী সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ-এর স্মৃতিচারণে আমরা শুনি, ১৯৪৭ সালে কলকাতা ইসলামীয়া কলেজে ছাত্রাবস্থায় বঙ্গবন্ধুর সাথে প্রথম সরাসরি সাক্ষাত এবং ঘনিষ্ঠ পরিচয় ঘটে এ.কে ফজলুল হকের।
সেদিনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন ‘ওছমান আলী মাস্টার সাহেব তখন কলকাতা বিশ^বিদ্যালয়ে ‘শিক্ষক’ হিসেবে অধ্যয়নরত। তাঁর পুত্র এ.কে ফজলুল হক সে সময়ে কলকাতায় গেলে একসাথে হই আমরা। বঙ্গবন্ধুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিই। সেই শুরু বঙ্গবন্ধুর সাথে তার যোগাযোগ। পরবর্তীতে ঘনিষ্ঠতাও।’
ভাষাসৈনিক ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ আল হারুণ চৌধুরী বলেন, ’৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু রাজবন্দী হিসেবে জেলে গেলেন, জেল থেকে মুক্তি লাভের মাস চারেক পরে চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে মিটিং এর পর ১২২ আন্দরকিল্লাস্থ জননেতা এমএ আজিজ সাহেবের বাসায় মুজিব ভাই মাওলানা ভাসানী রাতে ছিলেন। সেখানে ফজলুল হক ও আমি বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করি। ’৫৪ সালে এমএ আজিজের নির্বাচনী সমস্যা নিয়ে তিনিসহ ঢাকা গেল সদরঘাট আওয়ামী লীগ অফিসে বঙ্গবন্ধুর সাথে আমি ও এ.কে ফজলুল হক দীর্ঘ আলাপ করি। সে সময় আওয়ামী লীগ নেতা আজিজ ভাই ‘এ.কে ফজলুল হক ও আমাকে’ ফজলুল কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদী বলে উল্লেখ করেন।
’৫৭ সালে বঙ্গবন্ধু জেল থেকে মুক্তি লাভের পর চট্টগ্রাম আসেন। এ.কে ফজলুল হকসহ আমি তার সাথে নানা বিষয়ে আলাপ করি। ’৬২ সালের অক্টোবর থেকে আওয়ামী লীগ পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হলে ’৬৩ সালে আমি চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হই। ফজলুল হক তখন আমাদের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি ডা. এম.এম জাকেরিয়া চৌধুরী বলেন, ‘১৯৪৮ সালে তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান সাংগঠনিক কাজে চট্টগ্রাম আসেন। এম.এ আজিজের শহরের বাসায় তিনি অবস্থান করছিলেন। এম.এ আজিজ আমাকে খবর পাঠালে আমি সেখানে পৌঁছে দেখি একই সময়ে আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু এ.কে ফজলুল হককে। আজিজ সাহেব আমাদের তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় বঙ্গবন্ধু ফজলুল হক’কে আলাদা করে নাম ধরে তুই সম্বোধন করে বলেন, ‘কি অবস্থা তোর?’
বুঝতে বাকি রইলোনা ফজলুল হকের সাথে বঙ্গবন্ধুর যোগাযোগ আরো আগে, যা সে কখনো প্রকাশ করেনি।
আজিজ সাহেব ওকে আলাদা চোখে দেখতেন যেটা আমাদের অনেকের কাছেই পরিষ্কার ছিলো।
তখন আমরা বঙ্গবন্ধুকে মুজিব ভাই ডাকতাম। তিনি তখনকার সার্বিক পরিস্থিতি বর্ণনা করে সংগঠন গড়ে তোলা ও গোছানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। এ সময় আমাদের রাউজান থানা ছাত্রলীগের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর থেকে বঙ্গবন্ধু চট্টগ্রাম শহরে আসার খবর পেলে আমরাও ছুটে যেতাম।
১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা হলে সংগঠনের সহ-সভাপতি করা হলো এ.কে ফজলুল হককে। আমি সেক্রেটারি। ১৯৪৯ সালে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় মুসলিম শব্দ বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ গঠন হলে থানা ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করে রাউজান থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ, জয়েন্ট সেক্রেটারি ফজলুল হক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আমি। স্বাধীনতার পর আমি রাউজান থানা আওয়ামী লীগের ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হলেও ফজলুল হক মূল রাজনীতিতে কোন পদ-পদবীতে আগ্রহী ছিলো না, তবে কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দের সাথে এবং উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ ছিলো তার। সে জেলা আওয়ামী লীগ এবং রাউজান থানা আওয়ামী লীগ সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের দাবানলে আমি রাউজান থানা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক। ঢাকা কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়ের পরিচিত ও প্রিয় মুখ ফজলুল হক বন্ধু চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা ওয়াদুদ ভাইয়ের সাথে নানা কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছিলো।
এছাড়া, ৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২ সালে শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা আন্দোলন, ৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০ সালে সাধারণ নির্বাচন, অসহযোগ আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামে ফজলুল হক নিঃস্বার্থভাবে জীবনবাজী সংগ্রামে ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ও ৭০ এর নির্বাচনে অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ-এর ছায়াসঙ্গী ছিলেন আমাদের সাথে।
জেনারেল ইয়াহিয়া খানের অধীনে ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর সারা পাকিস্তানে অবাধ ও সুষ্ঠুতার প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল। সেই নির্বাচনে রাউজান-হাটহাজারী আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন মুসলিম লীগের ফজলুল কাদের চৌধুরী। এ নির্বাচনে হক সাহেব আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের পক্ষে রাউজানের প্রত্যেকটি ইউনিয়ন চষে বেরিয়েছেন।
একুশের কালজয়ী গানের স্রষ্টা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর কয়েক লাইন স্মৃতিচারণের মধ্য দিয়ে আমার শ্রদ্ধানিবেদন শেষ করতে চাই। তিনি লিখেন, ‘…আজ আর ভালো লাগছে না। তুমি যাও। এখানেই কথার ইতি টেনে বঙ্গবন্ধু বললেন, চৌধুরী, চট্টগ্রাম থেকে ‘আমার গুপ্তচর’ এসেছে। তুমি তাকে সাথে নিয়ে যাও। বুঝতে বাকি রইলো না চট্টগ্রামের এ.কে ফজলুল হক এসেছেন। বঙ্গবন্ধু ভেতরে গেলে হাসিমুখে ফজলুল হক বেরিয়ে এলেন, বললেন-চলো তোমার সাথে যাবো।
বঙ্গবন্ধুর বাড়িতেই আমার সাথে তাঁর বেশ ক’বার সাক্ষাত ঘটেছে। বঙ্গবন্ধুকে তিনি সমীহ করতেন আর বঙ্গবন্ধু তাঁকে তঁাঁর নিজস্ব ‘গুপ্তচর’ বলতেন।
চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নানা গ্রুপিংকে ‘হক’ সাহেব ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ করতে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত অপেক্ষায় ছিলেন।
এ.কে ফজলুল হক বাংলাদেশের একজন কৃতি সন্তান। কৃতি রাজনীতিবিদ। রাজনীতিতে তিনি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন। রাজনীতিতে কখনো সুযোগ-সুবিধার অন্বেষণ করেননি। বরং আদর্শভিত্তিক রাজনীতি করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যে দলটি নেতৃত্ব দিয়েছে, সেই আওয়ামী লীগ ভিত্তিক রাজনীতি করেছেন, সেই আওয়ামী রাজনীতিই তিনি আঁকড়ে ধরেন এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ গঠনের কাজে নিজেকে জড়িত রেখেছিলেন।
এ.কে ফজলুল হক-এর জন্ম চট্টলার রাউজানের উত্তর গুজরা গ্রামে। তিনি সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নিলেও সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মাননি। নিজের চেষ্টায় তিনি সমাজ ও সংস্কৃতির উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্বস্ত ভ্যানগার্ড হিসেবে চট্টগ্রামের রাজনীতিতে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সুজন ফজলুল হক বেশ সুনাম অর্জন করেছিলেন। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে তিনি ভূমিকা রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে।
দুই বন্ধু মিলে দৈনিক সংবাদ অফিসে ফিরলাম। দীর্ঘ রাত অবধি নানা বিষয়ে কথা হলো। বঙ্গবন্ধুর কথাগুলো বড় বেশি নাটকীয় মনে হয়েছিল আমার কাছে। আমার বন্ধুর কাছেও। ফজলুল হক সেদিনের মতো বিদায় নিলেন।
এতো বছর পর লন্ডনে ছুটির দিনে ফজলুল হকের কথা মনে পড়লো এই কারণে, তারই ঘনিষ্ঠজন কলামিস্ট ও রাজনীতিক মোফাচ্ছল আহমদ চৌধুরীর ফ্যাক্স পেয়েছি। ফজলুল হক আর নেই। মাত্র ৫৫ বছর বয়সে তিনি আমাদের কাছে স্মৃতি হয়ে গেলেন। বঙ্গবন্ধুকেও মাত্র ৫৫ বছর বয়সে ঘাতকরা নির্মমভাবে হত্যা করেছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচরদের অনেকেই মুখ লুকিয়ে ছিলেন। সেই দুঃসময়ে ফজলুল হকের প্রতিবাদী কর্মকাণ্ডে অনেক তরুণ নেতৃত্ব উজ্জীবিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর তাঁর উপর অকথ্য জুলুম-নির্যাতন হয়েছে। ফকা চৌধুরীর গুডস হিলে নিয়ে গিয়ে তাঁকে নির্মম নির্যাতন করা হয়। জীবন্মৃত অবস্থায় তাঁর পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়া হয়। প্রায় বছর খানেক শয্যাশায়ী থেকে একটু সুস্থ হলে তিনি পুরনো সাথীদের সাথে যোগাযোগ শুরু করেন। মৌলভী সৈয়দদের প্রতিবাদী যাত্রায় নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। সৎ, শুদ্ধ রাজনীতি থেকে উঠে আসা আপাদমস্তক নির্লোভ রাজনীতিক এ.কে ফজলুল হককে গভীরভাবে চেনার-মেশার সুযোগ হয়েছে মূল রাজনীতিতে অংশগ্রহণ এবং ভাষা আন্দোলনের সংগ্রাম মুখর সময় থেকে। রাজনীতির দীর্ঘ পথপরিক্রমায় অনেককে দেখেছি নিজস্বতা ভূলুণ্ঠিত করতে। পদ-পদবী এবং অর্থের কাছে নিজেকে বিকিয়ে দিতে।
মাস্টারদা সূর্য সেনের রাউজানের কীর্তিমান সহযোদ্ধা এ.কে ফজলুল হককে দেখেছি আমৃত্যু মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে নীরবে-নিভৃতে একাগ্রচিত্তে কাজ করে যেতে। বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় নেতাদের সাথে অন্তরঙ্গ ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের পরও তাঁর মধ্যে কোন অহমিকা কখনো প্রকাশ পায়নি। তিনি যেমন বিনয়ী ছিলেন তেমনি ছিলেন আওয়ামী লীগের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। এই মহৎ কর্মবীরের অকাল এবং আকস্মিক প্রয়াণে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির অপূরণীয় ক্ষতি হলো এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ হারালো একজন প্রকৃত আওয়ামী লীগারকে। সুনাম-দুর্নাম মানুষ মাত্রেরই থাকে। এ.কে ফজলুল হক চেয়ারম্যানের সুনামের পাল্লাটাই ভারি। এই সুনাম রক্ষায় তিনি আমৃত্যু আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা তাকে দেশের নানা ধরনের উন্নয়ন তৎপরতায় সাহায্য করেছে নিঃসন্দেহে। এই মানুষটি বেঁচে থাকলে আরও সমৃদ্ধ করে দেশ ও দশের ভাগ্য উন্নয়নে সাফল্য দেখাতে পারতেন বলে আমার বিশ্বাস। আমি তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি এবং পরিবারের সকল তৎপরতার সাফল্য কামনা করি।’
এ.কে ফজলুল হক। একজন অকুতোভয় জনপ্রতিনিধি। জীবনে জীবন যোগ করার ব্রতে যে-সাধনা জীবনকে পরিপূর্ণ করে, একজন মানুষকে প্রিয়, মহান করে তোলে, এ.কে ফজলুল হক তাঁর জীবনব্যাপী কর্মসাধনায় সেখানে পৌঁছতে চেষ্টা করেছেন, সফলও হয়েছেন। আর সকল সহকর্মী ও আমাদের জন্য রেখে গেছেন এক উজ্জ্বল উত্তরাধিকার। আমরা ক্রমশই যদি তাকে ছড়িয়ে দিতে পারি সবখানে, তবেই হয়তো একটি বাসযোগ্য ভূমি এবং সহনশীল সময়কে খুঁজে নিতে পারি।’
লেখক : বার্তা সম্পাদক, দৈনিক পূর্বদেশ।